ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অনন্য মামুনকে নিয়ে জল ঘোলা করলো কে!

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৮
অনন্য মামুনকে নিয়ে জল ঘোলা করলো কে! কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে দুই সহযোগীর মাঝে অনন্য মামুন

ঢাকা: মালয়েশিয়ায় আদম পাচারের অভিযোগে পরিচালক অনন্য মামুনের সদস্যপদ আজীবন নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। তবে এরইমধ্যে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিচারের আগেই কেন তাকে শাস্তি দেওয়া হলো! আর মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তারের পুরো ঘটনাটি নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। আসলে কি হয়েছিলো মালয়েশিয়ায়!

মালয়েশিয়ায় এক বা দু’জন বাংলাদেশি আটক হলেও সেই খবর সেখানকার স্থানীয় গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচারিত হয়ে থাকে।

এই যেমন তিনদিন আগে ‘আবাং বাংলা’ নামে একজন মানবপাচারকারী প্রায় ৫০ জনসহ আটকের খবর। মালয়েশিয়ার স্থানীয় প্রতিটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।  

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবরের ভিত্তি হিসেবে ছিলো অন্য সহশিল্পীদের বক্তব্য বা ফেসবুক স্ট্যাটাস।  দেশে ফিরছেন অনন্য মামুন, সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা 

মামুন আটক হওয়ার পর মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছিল। তবে হাইকমিশনের দ্বায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু মামুনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, ধরে নিতে হবে তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এই ধরনের অপরাধ প্রমাণ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। দূতাবাস বিষয়টির অধিকতর তদন্ত করছে।

মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক আইন অনুযায়ী এই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হলে বিনাবিচারে ২৮ দিন পর্যন্ত আটক হওয়ার বিধান রয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে ১৪ দিনেই তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন নির্মাতা মামুন। এবং গত ১২ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে দেশে ফিরেছেন।

এর আগে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর (রোববার) রাতে কুয়ালালামপুরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মামুনের সঙ্গে আরো ১৮ জন আটক হয়েছিলেন। মামুনের সঙ্গে তারা সবাই ছাড়া পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।

মামুন আটক হওয়ার পর ডানওয়াংগি পুলিশ জেলা প্রধান শাহারুদ্দিন আবদুল্লাহ একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এই সন্দেহভাজন ১৯ জনকে মালয়েশিয়ার বিশেষ নিরাপত্তা আইন ২০১২ (সিকিউরিটি অফেন্স স্পেশাল মেজার অ্যাক্ট, SOSMA) আওতায় আটক করা হয়েছে। পুলিশ হেড কোয়াটার্স এই ঘটনা তদন্ত করছে। আন্তর্জাতিক মানবপাচাররোধ বিষয়ক আইন ২০০৭ এর আওতায় এটি হচ্ছে।

তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারতো মামুনসহ অন্যদের।

গত ১৩ ডিসেম্বর ৫৭ জনের একটি দল নিয়ে পরিচালক অনন্য মামুন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যান। দলে বেশ কয়েকজন শিল্পী এবং অভিনেতা ছিলেন। ‘সিনেমাটিক বাংলাদেশি নাইটস’ নামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তারা। অনুষ্ঠানটি ২৩ ডিসেম্বরে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আড়াই হাজারের উপর দর্শক সমাগম হয়।

অনুষ্ঠানের উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাসসহ অন্য শিল্পীরাও মামুন আটক হওয়ার পর অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনা তোলেন। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন গায়ক আসিফ আকবর, আঁখি আলমগীর, এইচএম রানা, চিরকূট ব্যান্ড, অভিনেত্রী আনিকা কবির শখ, মামুন হাসান ইমন, শওকত হোসেন নীরব, মিষ্টি জান্নাতসহ আরও বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান শিল্পী। তাদের অনেকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকেই ঘটনাটি জানাজানি হয়।

মালয়েশিয়া থেকে ফেরার পর ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, মালয়েশিয়ায় তার এক বন্ধুর মাধ্যমেই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের শুরু। তবে অনুষ্ঠানটি করতে গেলে সেখানে অবস্থানরত অনেকেই তাকে বাধা দিচ্ছিলেন। শো’র তিনদিন আগে তার কাছে ৫০ হাজার রিঙ্গিত দাবি করা হয়। দিতে অস্বীকৃতি জানালে, অনুষ্ঠান বানচাল এবং শো'র ক্ষতি করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়াও অনেকে বিনামূল্যে টিকিট চাইতে থাকেন।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটির রাজীব হোসেন এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি কমিউনিটির কোনো ধরনের আয়োজন গোলযোগ ছাড়া হয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া দুষ্কর। কুয়ালালামপুরে আয়োজিত কিছু অনুষ্ঠানে মানবপাচার হয়ে থাকে যেমন সত্যি, তেমনি অনুষ্ঠানগুলোতে লাভের অংশে ভাগ বসাতে যেমন ষড়যন্ত্রের জাল ছড়ায় সেটাও সত্যি। প্রতিটি অনুষ্ঠানের রুটি, হালুয়ার ভাগ না পেলে আয়োজকদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ আনেন এক শ্রেণীর প্রবাসী। কুয়ালালামপুরে যেকোনো আয়োজনেই একটি মহল চাঁদাবাজিতে তৎপর হয়ে ওঠে।  

৩০ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এই ব্যবসায়ী বলেন, যদি তারা সন্দেহজনক হতো, তবে তো এয়াপোর্টেই আটক হতো। আবার এখানে ৯ দিন ছিলেন, অনুষ্ঠানের আগেও আটক হতে পারতেন। হয়তো চাঁদাবাজদের কাঙ্ক্ষিত অর্থ দেয়নি বলেই এই হয়রানি করা হয়েছে, ধারণা করেন তিনি।

মামুন দেশে ফিরে গণমাধ্যমের কাছে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আপাত দৃষ্টিতে সেটাই ধরে নিতে হবে।

মামুন আটক হওয়ার ৭ দিনও পেরুলো না। কুয়ালালামপুরে পুলিশ তদন্তের আগেই জরুরি বৈঠক ডেকে বসে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। যেন এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন কেউ কেউ।

গত ৩০ ডিসেম্বর (শনিবার) সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় অনন্য মামুনের সদস্যপদ আজীবন নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি।

যেহেতু মামুন এখন দেশে ফিরে এসেছেন, তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যে পাওয়া যায়নি সেটা ধরে নিতেই হবে। তাহলে জল এতো ঘোলা করলো কে? আর কোন গ্রুপই বা এর সুবিধা লাভ করলো, সেটিও ভাবনায় থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৮
এমএন/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।