ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৭০১ প্রতিমা নিয়ে শিকদার বাড়ির দুর্গা উৎসব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৮
৭০১ প্রতিমা নিয়ে শিকদার বাড়ির দুর্গা উৎসব বাগেরহাট শিকদার বাড়ির দুর্গা উৎসব। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজা উপলক্ষে সারাদেশ উৎসবের দেশে পরিণত হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আনন্দ উপভোগ করে এ উৎসব। এ দুর্গা পূজাকে ঘিরে বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর শিকদার বাড়িতে করা হয়েছে জমকালো চোখ ধাঁধানো আয়োজন।

গত ছয় মাস ধরে ১৫ জন প্রতিমা শিল্পী রাত-দিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন ৭০১টি প্রতিমা। এসব প্রতিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের কাহিনী।

প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সাজসজ্জার কাজে।

দেবী দুর্গা এবছর ঘোড়ায় চড়ে আসবেন আর যাবেন দোলায়। ১৫ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর চলবে দুর্গাপূজা উৎসব। ব্যবস্থা করা হয়েছে আধুনিক লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেম। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে পুকুরের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে ৪০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন লক্ষ্মী-নারায়ণ। বাগেরহাট শিকদার বাড়ি এবারের পূজা মণ্ডপের দু’পাশে নানা পরশা সাজিয়ে বসেছেন শতাধিক দোকানি।
বাগেরহাট শিকদার বাড়ির দুর্গা উৎসব।  ছবি: বাংলানিউজ
এদিকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু না হলেও এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম এ পূজা মণ্ডপ দেখতে এরই মধ্যে ভিড় করছে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থী ও ভক্তদের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ৪৮টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে মন্দির ও এর আশেপাশের এলাকা।  

এদিকে লাখো দর্শকদের নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সংযোগের সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল টাওয়ার। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও রাখা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শতাধিক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

দর্শনার্থী গৌরাঙ্গ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর শিকদার বাড়িতে পূজার সময় দেখতে আসি। কিন্তু পূজার সময় মানুষের প্রচুর ভিড় থাকায় ভালো করে দেখতে পারি না। তাই এবার পূজার আগেই এসেছি। মন্দিরের প্রতিমা সাজসজ্জা দেখে আমি মুগ্ধ।
বাগেরহাট শিকদার বাড়ির দুর্গা উৎসব।  ছবি: বাংলানিউজ
ঝিমি মন্ডল নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দেখে অভিভূত হয়েছি। সব ধর্মের মানুষ এই দুর্গোৎসবে মিলিত হবে। আশা করছি দেশের সেরা এ পূজা মণ্ডপে দেশ-বিদেশের ভক্তরা ও দর্শনার্থীরা আসবেন। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন।

দেশের বৃহত্তম এ আয়োজনের প্রধান প্রতিমা শিল্পী (ভাস্কর) বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় বাংলানিউজকে বলেন, গত ছয় মাস ধরে ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে রাত-দিন কাজ করে ৭০১ প্রতিমা তৈরি করেছি। এখানে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এ চার যুগের কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া সমসাময়িক কিছু বিষয়ও ওঠে এসেছে প্রতিমায়। দর্শক আকৃষ্ট করতে মণ্ডপের পাশে পুকুরের মাঝে ৪০ ফুট উঁচু লক্ষ্মী-নারায়ণের প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি গত বছরের থেকে এবছর দর্শনার্থীরা বেশি আনন্দ উপভোগ করবেন।

সাজসজ্জার মূল দায়িত্বে থাকা মাগুরার কেশবমোড়ের বৈশাখী ডেকারেটরের মালিক মো. আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, দুই মাস ধরে ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে এ মণ্ডপের সাজসজ্জার কাজ করছি। আমরা চেষ্টা করছি সাজসজ্জার মাধ্যমে দর্শকদের মনকাড়া একটি মণ্ডপে পরিণত করতে।
বাগেরহাট শিকদার বাড়ির দুর্গা উৎসব।  ছবি: বাংলানিউজ
আয়োজকদের পক্ষে দেব প্রসাদ রায় বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা মোংলা-মহাসড়কের বাগেরহাট সদরের চুলকাঠি বাজার সংলগ্ন হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পূজা মণ্ডপের আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আগত দর্শকদের নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলার পাশাপাশি ৩ শতাধিক নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। ৪৮টি সিসি ক্যামেরা ও মণ্ডপের আশপাশের দেড় কিলোমিটার জুড়ে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে রাতে দর্শনার্থীদের কোনো সমস্যা না হয়।

আয়োজক লিটন শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, আট বছর আগে বাবার ইচ্ছা পূরণে বাড়িতে দুর্গা পূজার আয়োজন করি। অষ্টম বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিয়ে আমাদের এ মিন্দরে দুর্গাপূজার আয়োজন। এবছর ৭০১টি প্রতিমা নিয়ে আমাদের এ আয়োজন। গত বছর ছিল ৬৫১টি প্রতিমা।
বাগেরহাট শিকদার বাড়ির মণ্ডপের পাশে পুকুরের মাঝে ৪০ ফুট উঁচু লক্ষ্মী-নারায়ণের প্রতিমা।  ছবি: বাংলানিউজ
পুলিশ সুপার (এসপি) পঙ্কজ চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, সারা দেশের মতো শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। বাগেরহাটে ৬২৪টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে সবচেয়ে বড় পূজা মণ্ডপটি হাকিমপুর শিকদার বাড়িতে। সেখানে নিরাপত্তার জন্য দু’ধরনের মেটাল ডিরেক্টর ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। শতাধিক পুলিশ সদস্য ছাড়াও আনসার সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকরা নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে।
বাগেরহাট শিকদার বাড়ির দুর্গা উৎসব।  ছবি: বাংলানিউজ
২০১০ সাল থেকে শিকদার বাড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের বৃহত্তম দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়। লিটন শিকদার নামে এক ব্যবসায়ী এই আয়োজন করে আসছেন। দিনদিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালে প্রতিমার সংখ্যা ছিল ৬০১টি। গত বছর ছিল ৬৫১টি। আর এবার এই মণ্ডপে ৭০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ বলে দাবি করেন পূজার আয়োজক ডা. দুলাল শিকদার ও তার ছেলে লিটন শিকদার এবং বাগেরহাট পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায়।

বাংলাদেশ  সময়: ১২১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।