ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যমুনার পানি কমছে, ভাঙছে তীর সংরক্ষণ বাঁধ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
যমুনার পানি কমছে, ভাঙছে তীর সংরক্ষণ বাঁধ ভেঙেছে তীর সংরক্ষণ বাঁধ। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: তখন চোখ থেকে ঘুম যায়নি। কিন্তু পানিতে কোনো কিছু পড়ার শব্দ ভেসে আসছে কানে। শব্দে বুকের ভেতর ধরপড় করে ওঠে রমিছার। দ্রুত বিছানা থেকে ওঠে পড়েন। স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। দ্রুত ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। দরজা খুলে সামান্য এগোতেই বুঝতে পারেন ঘটনা কি।

যমুনার পানি কমছে। সেই পানিতে ভেঙে পড়ছে নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ।

বাঁধের মাটি বড় বড় চাপ আকারে পানিতে ভেঙে পড়ে শব্দ হচ্ছে।

রোববার (১৪ অক্টোবর) ভোরে আর তাতেই ঘুম ভাঙে যমুনায় সর্বস্ব খোয়ানো রমিছার।

খবর পেয়ে সংশ্লিষ্টরা যমুনা নদীর সংরক্ষণ বাঁধ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। ভাঙনরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকে বাঁধের ধসে যাওয়া অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। ভেঙেছে তীর সংরক্ষণ বাঁধ।  ছবি: আরিফ জাহানবগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ‍যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বরইতলি গ্রামের কাছে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদী তীর এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক বছর কমবেশি যমুনায় ভূমি বিলিন হয়। সঙ্গে বসতভিটা, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ অনেক অবকাঠামো হিংস্র যমুনা গর্ভে বিলিন হয়। এতে করে অসংখ্য মানুষকে সর্বস্ব খোয়াতে হয় বা হচ্ছে।

ফলে ভাঙনরোধে দু’বছর আগে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার কৈয়াগাড়ি-বরইতলি এলাকায় যমুনার নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ৩শ’ মিটার। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর দু’বছরের প্রকল্প এলাকায় ভাঙন দেখা যায়নি। কিন্তু এবার যমুনার পানি কমতে থাকায় হঠাৎ এই এলাকায় বাঁধে ধস দেখা দেয়।

আব্দুস সোবহান, মফিজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, কয়েকদফা যমুনার ভাঙনের শিকার হয়ে সবকিছু শেষ। আশ্রয়ের নিজস্ব জায়গাটুকু যমুনার পেটে চলে গেছে। এরপর তারা বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন তার পাশেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন স্থানের দূরত্ব যমুনা পারের বসতভিটা থেকে মাত্র ৫০ মিটার বলেও জানান যমুনার ভাঙনে সর্বস্ব খোয়ানো এসব ব্যক্তিরা।

সাইদুল ইসলাম, মর্জিনা বেগম, ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, যমুনার ভাঙনকবলিত এলাকার পুরানো বাঁধে এখনও প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার বসবাস করেন। গেলো দু’বছর পর্যন্ত সেখানে কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু এবার থেকে যমুনায় সর্বস্ব খোয়ানোর সেই খেলা শুরু হলো মনে করে আতঙ্কিত বাঁধ এলাকার পাশ দিয়ে বসবাসকারী বাসিন্দারা।

ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল বাংলানিউজকে জানান, যমুনার পানি কমতে থাকায় পানির স্রোতের তীব্রতাও বেড়েছে। এতে করে বাঁধেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, বাঁধের বেশ খানিকটা অংশ যমুনায় বিলিন হয়েছে। খবর পেয়েই ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভাঙন এলাকাসহ সম্ভাব্য সব স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। তাই বাঁধ এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই যোগ করেন প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।