প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (১৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গণমাধ্যমের জন্য এই আইনটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকেরা শ্রমিক হিসেবে নয়, সংবাদকর্মী হিসেবে গণ্য হবেন।
‘আইন লঙ্ঘন করলে গণমাধ্যম মালিকের শাস্তিসহ সরকার কোনো কারণে গণমাধ্যম বন্ধ করে দিতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দ্য নিউজপেপার ইমপ্লয়েস (চাকরির শর্তাবলী) আইন-১৯৭৪ আওতায় এটা চলতো। এর সঙ্গে শ্রম আইনের কিছুটা ওভারলেপিং হয়। সাংবাদিকদের শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং ডেফিনেশনের মধ্যে শ্রমিক হিসেবে ডিফাইন করা হয়েছে, ওই অংশটা ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছে। যারা গণমাধ্যমে কাজ করবে ভিন্ন ধরনের শ্রমিক হিসেবে থাকবে। শ্রমিক কথাটা থাকবে না। শ্রম আইনে শ্রমিক হিসেবে ডিফাইন করা হয়েছে, ওখান থেকে বেরিয়ে আসবে।
আইনে গণমাধ্যম কর্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে কর্মরত পূর্ণকালীন সাংবাদিক, কলা-কুশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী বা নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকাধীন ছাপাখানা এবং বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিত কর্মী।
‘এখানে একটা ওয়েজ বোর্ডের কথা বলা হয়েছে, তা শ্রম আইনের ওয়েজ বোর্ড নয়, এটা হলো গণমাধ্যম কর্মী ওয়েজ বোর্ড। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকার ওয়েজবোর্ড গঠন করবে। ওয়েজবোর্ডের সিদ্ধান্ত সকল গণমাধ্যম মালিককে পালন করতে হবে। ’
সম্প্রচার কর্মী হলো- সম্প্রচারে কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত গণমাধ্যমের কর্মী। আর প্রযোজক, পাণ্ডুলিপি লেখক, শিল্পী, ডিজাইনার, কার্টুনিস্ট, ক্যামেরাম্যান, অডিও ও ভিডিও এডিটর, চিত্র সম্পাদক, শব্দ ধারণকারী, ক্যামেরা সহকারী, গ্রাফিক্স ডিজাইনারসহ পেশাজীবীরা যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের কলা-কুশলী বলা হবে।
আইনে নতুন প্রস্তাবনা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা পরিদর্শক হিসেবে গণ্য হবেন। পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকরিবিধি থাকবে।
প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন নিয়ে বলা হয়, নিয়োগের একবছর পর থেকে ভবিষ্য তহবিলে মাসিক চাঁদা দিতে পারবেন। আগে দুই বছর চাকরি হলে ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা দিতে পারতেন। সর্বনিম্ন ৮ ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অর্থ এই তহবিলে জমা রাখা যাবে। আগে ৭ শতাংশ অর্থ জমা রাখা যেত। মালিককেও সমহারে টাকা রাখতে হবে।
‘সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা করা হয়েছে। এর থেকে বেশি কাজ করালে ওভারটাইম দিতে হবে। ’
ছুটির ব্যাপারেও অগ্রগতি রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরষিদ সচিব বলেন, আগে ১০ দিনের সিএল-কে ১৫ দিন করা হয়েছে। অর্জিত ছুটি ৬০ দিনের বদলে ১০০ দিন হবে, ১১ দিনে একদিন করে জমা হবে।
প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী চাকরির ১৮ শতাংশের ১ শতাংশ সময় পূর্ণ ওয়েজে অসুস্থতাজনিত ছুটি পাবেন। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে।
এককালীন বা একাধিকবার সর্বোচ্চ ১০ দিন উৎসব ছুটি পাবেন।
নারীদের জন্য সরকারি বিধি অনুযায়ী অর্থাৎ সরকারি নিয়মে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। আগে আট সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতেন নারী গণমাধ্যমকর্মীরা।
প্রত্যেক গণমাধ্যম কর্মী তিন বছর পর পর পূর্ণ বেতনসহ এক মাসের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি পাবেন। এটা নতুন সংযোজন। চিকিৎসা সুবিধারর জন্য গণমাধ্যমকর্মী বিধিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিমা সুবিধা পাবেন।
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রচালিত আইন অনুসরণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করে অভিযোগ নিরসন পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।
যদি কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিকট একজন গণমাধ্যমকর্মীর বকেয়া পাওনা থাকে তবে গণমাধ্যমকর্মী বা তার লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, মৃত গণমাধ্যমকর্মীর ক্ষেত্রে তার পরিবারের কোনো সদস্য বকেয়া পাওনা আদায়ে যথপোযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন।
বিধি লঙ্ঘন করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে, এজন্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। জরিমানা আদায় না হলে আদালত জেল দিতে পারবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি, এটি বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।
সরকার এই আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াসহ যে কোনো পর্যায়ে সরকার প্রদত্ত যে কোনো সুযোগ-সুবিধা স্থগিত বা বন্ধ করে দিতে পারবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বিরোধ দেখা দিলে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮/আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এমএ