দুর্গাপূজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ সন্ধিপূজার রীতি প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আজও প্রবহমান। দিন ও রাতের সন্ধিক্ষণ যেমন সন্ধ্যা, ঠিক তেমনি অষ্টমী তিথির শেষ ও নবমী তিথি শুরুর সন্ধিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেবীর ‘সন্ধিপূজা’ আরাধনার মাধ্যমে স্মরণ করে অসুরবধের কাহিনী; ভক্তি ভরে প্রার্থনা জানায় ভয়ংকরকে বিনাশ করার শক্তির জন্য।
সন্ধ্যা নামতেই ঢাক-ঢোল, কাঁসর ঘণ্টার শব্দ, ফুল-চন্দন আর আরতিতে মুখর হয়ে উঠে রাজধানীসহ সমগ্র দেশের পূজা মণ্ডপগুলো। সেইসঙ্গে শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মন্দির প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয় ভিন্ন আমেজ। অষ্টমী দিনরাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সী মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে প্রতিটি পূজামণ্ডপ। সময়ের নিরিখে মহাষ্টমীর শেষের ২৪ মিনিট এবং মহানবমীর শুরুর ২৪ মিনিট, মোট ৪৮ মিনিট হলো মহা সন্ধিপূজার সময়কাল। সন্ধিপূজা হলো- সেই সন্ধ্যার প্রতীক যখন দুর্গা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই ভয়ংকর অসুরকে বধ করেছিলেন। তাই এসময় ১০৮টি পদ্মফুল ও ১০৮টি প্রদীপ দিয়ে দেবীকে প্রণাম জানানো হয়।
পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়, মহিষাসুরের সঙ্গে যখন দুর্গা ভয়ানক যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, সেইসময় মহিষাসুরের দুই বন্ধু চণ্ড ও মুণ্ড পেছন থেকে দেবীকে আক্রমণ করেন। রণনীতির চুক্তি ভঙ্গ হওয়ায় দেবী ভীষণ ক্ষিপ্ত হন এবং রাগে তার মুখ নীল হয়ে যায়। এসময় দেবী তার ত্রিণয়ন উন্মীলিত করেন এবং চামুণ্ডা রূপ ধারণ করেন। চামুণ্ডা রূপে দেবী দুর্গা চণ্ড ও মুণ্ডের মাথা কেটে নেন তার হাতের খড়গ দিয়ে। দেবীর এ চামুণ্ডারূপেরই আরাধনা করা হয় সন্ধিপূজার মাধ্যমে। সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী পূজামণ্ডপে সন্ধিপূজা নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বিভিন্ন দর্শনার্থীর সঙ্গে। এসময় আশীষ মুখার্জী নামে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলেন, সন্ধিপূজার এই ক্ষণে দুর্গা মা ভিন্ন রূপ নিয়ে অসুর বধ করেছিলেন। তাই দুর্গা যেনো অসুর বধ করে সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং আমাদেরও সেই শক্তি দেন, তা-ই এ আরাধনার মূল উদ্দেশ্য।
ভয়ংকর বিনাশের আরাধনার এ সন্ধ্যায় প্রতিটি পূজামণ্ডপই সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ভক্তমহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সী মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে। কিশোর কিশোরীরা মেতে উঠে আরতি নাচে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
এইচএমএস/টিএ