মহাষ্টমীর দিন বুধবার (১৭ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মশিয়াহাটী আঞ্চলিক দুর্গাপূজা মন্দিরে মা দুর্গার প্রতিমার পাশাপাশি আরও ২০১টি প্রতিমার মাধ্যমে পৌরাণিক কাহিনী’র বাস্তব প্রতিবিম্ব ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে।
অন্যদিকে, এ মন্দিরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা কেশবপুরের নিমতলা মহাশ্মশান মন্দিরে ৪০১ প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
মশিয়াহাটি আঞ্চলিক দুর্গাপূজা মন্দিরে পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী প্রতিমার মধ্যে রয়েছে, এবারে গীতা থেকে বকরাক্ষসবধ, তৃণবর্তা উদ্ধার, শ্রীকৃষ্ণের লীলা, গীরিগোবর্ধন পর্বত উত্তোলন, রামায়ণ থেকে রাবণবধ, সীতাহরণ,মাধব পাটনি, অযোধ্যার সিংহাসনে রাম এবং মহাভারতের ভীষ্মের শরসজ্জা, জরাসিন্দুবধ, খিঁচকবধ, ভীম-দুর্যোধনের যুদ্ধ ইত্যাদি দৃশ্য। এছাড়া রাজা হরিস চন্দ্রের রাজ্য দান এবং শ্মশান ঘাট, মাধব পাটনির খেয়া-ঘাটে রাম-লক্ষণ, বৈতরণী নদী পার, শ্রীকৃষ্ণ কতৃক শিশুপাল বধ, মহাদেব ও অশ্বথমার যুদ্ধ, ভীম কতৃক দুঃশাসনের রক্ত পান, জটায়ু যুদ্ধ, শবরীর আশ্রমে রাম-লক্ষণ, রাম-লক্ষণ কতৃক খর ধুসন বধ, অঘাসুর বধ, ভক্ত হরিদাসকে বাইশ বাজারে বেত্রাঘাত, রামপ্রসাদের বেড়া বাধা, কর্মফলদাতা শনিদেব, মা কালীর প্রতিমা, নারায়ন কতৃক গজরাজ উদ্ধার, দেবকীর ছয়পুত্র আনায়ন প্রভৃতি পৌরাণিক কাহিনী প্রতিমার মধ্যদিয়ে প্রতিবিম্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মশিয়াহাটি আঞ্চলিক দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় কুলটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, অশুভ শক্তির বিনাশ ও বিশ্বমানবতার শান্তি কামনায় মণিরামপুরের ‘ছিয়ানব্বই’ (হিন্দু অধ্যুষত ৯৬টি গ্রাম) গ্রামের প্রাণকেন্দ্র মশিয়াহাটী অঞ্চলের ১৪টি গ্রামের মানুষের সাধ ও সাধ্য মতো ভিন্ন আড়ম্বরে সাঁজিয়েছে দেবী অর্চনার বরণ ডালা।
তিনি আরও জানান, ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছরের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এ ধরণের ভিন্ন আয়োজন করে উৎসবে পরিণত করা হচ্ছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সবাই এ আয়োজনকে সুন্দর করেছে তুলছেন। প্রতিমা বিসর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, যশোরাঞ্চলের অধিকাংশ মন্দির ও মণ্ডপে শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) রাতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। তবে ভক্তদের কথা চিন্তা করে এ মন্দিরে আরও অন্তত তিনদিন পরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।
কেশবপুরের ভেরচি মহাশ্মশান মন্দির কমিটির সভাপতি হরেন্দ্র নাথ বলেন, গত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও ভেরচি মহাশ্মশান মন্দিরে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর মন্দিরে ৪০২টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এসব প্রতিমার মধ্যদিয়ে পৌরাণিক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। তবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, অন্য বছর দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনা করে অন্তত তিনদিন পরে বিসর্জন দেওয়া হবে, তবে এ বছর এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এ বছর যশোরের ৬৭০টি স্থানে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এরমধ্যে যশোর সদরে ১৪৫, ঝিকরগাছায় ৫১, শার্শায় ৪১, চৌগাছায় ৫১, বাঘারপাড়ায় ৮৯, অভয়নগরে ১২৫, কেশবপুরে ৯২ এবং মণিরামপুরে ৯৫টি পূজা মণ্ডপ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
ইউজি/ওএইচ