বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ব্যারিস্টার মইনুলকে তার অপরাধ স্বীকারপূর্বক প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
নাসিমুন আরা হক মিনু আরো বলেন, আমি আসলে আমাদের নারীদের চরিত্র রক্ষার দায়িত্ব কাউকে দিতে চাই না। আমাদের চরিত্র আমরাই রক্ষা করতে পারব। এই দায়িত্ব আমি কাউকে দেব না। সাংবাদিক সমাজকে এভাবে যারা হেনস্থা করছেন, অপদস্থ করছেন, অসম্মান করছেন, তাদের এই অধিকার আমরা দেই নাই। এর আগেও আমরা দেখেছি, প্রকাশ্যে টকশোতে ভয়ঙ্করভাবে অপমান করা হচ্ছে, সেই দৃশ্য আমরা সবাই দেখেছি। এ ধরনের লোকদের টকশোতে আনা উচিত না বলে আমরা মনে করি।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে এক খোলাচিঠিতে মাসুদা ভাট্টি বলেছেন, আমার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছি যে, যুক্তিহীন মানুষই সাধারণত ব্যক্তিগত আক্রমণ করে। একজন নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টি সবসময়ে তার চরিত্রকে নির্দেশ করে আক্রমণ করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। একাত্তর টকশোর উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা আপনাকে (মইনুল হোসেন) বলেছেন, আপনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। এটা তিনি (মিথিলা ফারজানা) মেনে নেবেন না। কিন্তু আপনি অত্যন্ত রূঢ় হয়ে পুরো অনুষ্ঠানে কথা বললেন। বরাবরের মতোই সেটা ছিল আক্রমণাত্মক।
খোলাচিঠিতে মাসুদা ভাট্টি আরও বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় যখন আপনি (মইনুল হোসেন) আমাকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে ক্ষমা চাইলেন, তখন আপনাকে আমি বলেছি— যে অন্যায় কাজটি আপনি করেছেন একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন টকশোতে, তার সাক্ষী অনুষ্ঠানটির লাখ লাখ দর্শক। তাদের অগোচরে আপনি একটি ফোন করে ক্ষমা চাইলে, আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে ক্ষমা করলেও যে অগণিত নারীকে আপনি অপমান করেছেন, তাদের ক্ষোভ কোনোভাবেই তাতে প্রশমিত হয় না। যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে জনসমক্ষে, সেহেতু আপনাকে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহারপূর্বক অপরাধ স্বীকার করে সবপক্ষের কাছে প্রকাশ্যে মার্জনা চাওয়াটা কাম্য। আশা করি, আপনি আমার ও আমার মতো অসংখ্য নারীর সম্মানহানির ক্ষতের জায়গাটি উপলব্ধি করবেন এবং প্রকাশ্যে সবার কাছে ক্ষমা চাইবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক মুন্নী সাহা বলেন, এই জমানায় যদি কেউ মনে করে ভয় পেয়ে গেল কিনা, সে তাহলে এই জমানায় বাস করে না। আমরা আজকের প্রতিবাদটিকে একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে চাই। আপনারা যখন আমাদের কাছে হেরে যাবেন, তখন আমাদের চরিত্র নিয়ে বলতে থাকবেন, আর আমরা কাজ করতেই থাকবো। কিন্তু ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আপনারা যারা নানা সময়ে রাজনৈতিকভাবে কলঙ্কিত, রাজনৈতিকভাবে চরিত্রহীন, আপনারা একটু সাবধান থাকবেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে কোনো টকশোতে না রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি আমার বন্ধুদের অনুরোধ করবো— তারা যেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে টকশোতে না ডাকে। আমি অনুরোধ করবো, আমার সাংবাদিক ভাইদের ব্যারিস্টার মইনুল যে অনুষ্ঠানে থাকবেন, সেই সংবাদ সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকবেন। আমি আমার তিনটি প্রতিষ্ঠানকে বলে দিয়েছি এবং আমার বন্ধুদের বলেছি। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন শুধু নারীর শত্রু নয়, তিনি এখন গণশত্রু।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাছিমা আক্তার সোমা, সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান আরা শিল্পী।
সাংবাদিকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন— মিথিলা ফারজানা, নাসিমা খান মন্টি, শাহনাজ মুন্নী, ফারজানা রূপা, আঙ্গুর নাহার মন্টি, ফারহানা মিলি, নাদিরা কিরণ, মুনমুন শারমিন শামস প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
এমএইচ/এমজেএফ