এ উপলক্ষে পলাশীর মোড় এলাকা থেকে ওয়াইজঘাট পর্যন্ত মানুষের ঢল নেমেছে। আর এর মধ্য দিয়েই শেষ হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
এর আগে সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয় সিঁদুর খেলা। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর নিয়ে একে অপরকে পরিয়ে দেয়। পাশাপাশি ছিলো বিভিন্ন বয়েসী নারী-পুরুষের আবির খেলা। সিঁদুর ও রঙে একে অন্যকে রাঙিয়ে এরপরই যেনো বেজে ওঠে বিষাদের সুর। এরপর প্রতিমা নিয়ে ট্রাকে করে ঢাকের তালের পাশাপাশি ‘দুর্গা মা-ই কি, জয়’ স্লোগান দিতে দিতে ঘাটের দিকে এগিয়ে যান বিভিন্ন বয়সী মানুষ। তবে সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ঢাকেশ্বরী মন্দির কর্তৃপক্ষ সিরিয়াল নম্বর দিয়েছে। আর সে অনুসারে প্রতিমা বিসর্জনের যাত্রা শুরু হয়।
সর্বপ্রথম পলাশীর মোড়ে দুর্গার প্রতিমা নিয়ে উপস্থিত হয় আজিমপুর সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদ। এরপর ছিল খিলক্ষেত সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘসহ আরও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অন্যান্য প্রতিমা বাহিত ট্রাক ও ভক্তরা। তবে বিশাল বিসর্জন যাত্রার লাইনের শুরুতে ছিলো মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির ট্রাক।
এদিকে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে পলাশীর মোড়ে বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করে রাখতে দেখা গেছে। তাছাড়া পুলিশের চকবাজার মডেল থানা ও লালবাগ জোনের সাব কন্ট্রোল রুম এবং পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
প্রতিমা বিসর্জনের বিষয়ে আজিমপুর সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদের পুরোহিত শিবু ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে পৃথিবীতে আসেন। লক্ষ্মী, কার্তিক, সরস্বতী আর গণেশ এই চার সন্তানকে নিয়ে নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবারবাড়িতে অবস্থানের পর আবার ফিরে যান দেবালয়ে। দেবীর অবস্থানকালে এই পাঁচদিন পৃথিবীর ভক্তরা ‘দেবী মা’-এর বন্দনা করেন। এ বিষয়ে আজিমপুর থেকে আগত পূজারী নারায়ণ সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে জানান, আমরা এবার সাত্বিক পূজা করেছি। যে কারণে কোনো ধরনের মাদকের কোনো ছোঁয়া ছিল না পূজায়। ওই পূজা যারা করে তারা হলো তামসিক পূজা করে। সেখানে সব নারীকে মা ও বোনের চোখে দেখা হয় না। কিন্তু সাত্বিক পূজার ক্ষেত্রে এই যে এখানে যেসব নারীরা গান বা ঢাকের তালে নাচছে তাদের আমরা মা ও বোনের চোখে দেখি। এ কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। আর আমি আগামী নির্বাচন যেনো সুষ্ঠু হয় সে প্রার্থনা বিশেষভাবে করেছি। তাছাড়া এই ধরনের পূজায় নিজস্ব বলে কোনো বিষয় নেই।
বিসর্জন যাত্রায় খিলক্ষেত থেকে আগত কলেজ ছাত্রী মায়া রানী বাংলানিউজকে জানায়, মা চলে যাচ্ছেন এটা যেমন আনন্দের বিষয় তেমনি কষ্টেরও। আনন্দের কারণ মা'র কারণে অনেক আশির্বাদ পেয়েছি নিজের ও সবার জন্য। আর মা দুর্গা চলে যাওয়ার মাধ্যমে ত্যাগের শিক্ষায় শিক্ষিত করে দিয়ে গেছেন আমাদেরকে। তাই আমরা হাসিমুখে আনন্দযাত্রার মাধ্যমে মাকে বিদায় দিচ্ছি।
এর আগে পাওয়া বাংলাদেশ সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির তথ্য মতে, এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৮০৪, চট্টগ্রামে ৪৫০৬, সিলেটে ২৩৪১, খুলনায় ৪৮৮৩, রাজশাহীতে ৩৫৪২, রংপুরে ৫৩৭১, বরিশালে ১৭২৪ ও ময়মনসিংহে ২১০১। আর রাজধানী ঢাকাতে এবার পূজা হয়েছে ২৩৪টি মন্ডপে। গত বছর সারা দেশে ২৯ হাজার ৭৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং রাজধানীতে মন্ডপের সংখ্যা ছিল ২২৫টি।
তাছাড়া ঢাকা মহানগরীর ২৩৪টি মণ্ডপের মধ্যে ৯টি ছিল সবচেয়ে বড় মণ্ডপ। এগুলো হলো-ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ, কলাবাগান পূজামণ্ডপ, বনানীর মণ্ডপ, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, উত্তরা সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট সমাজকল্যাণ সংঘ ও বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজামণ্ডপ। এ নয়টি মণ্ডপসহ সব মণ্ডপেই কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৮
এমএএম/এএটি