শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শেষদিন বিজয়া দশমীতে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
আয়োজকেরা জানান, জেলার রামুসহ কয়েকটি উপজেলায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হলেও শুধু সৈকতের এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ১৫০টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে বেলা ২টার পর থেকে ট্রাকে করে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে আসতে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিসর্জনের আগ পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে ধরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা।
শুধু তাই নয়, নাচে-গানে এক অন্য রকম আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লাখও মানুষের।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের বিজয়া মঞ্চ থেকে বিসর্জনের অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল ৪টায়। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন-কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য খোরশেদ আরা হক, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, এ দেশের মাটি ও মানুষ অসম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। এদেশে সব ধর্মের সহাবস্থানের কারণে একইসঙ্গে ঈদ, পূজা, প্রবারণা ও বড়দিন উদযাপিত হয়। বিজয়া দশমীর এই মহামিলন মেলা আরও একবার প্রমাণিত হলো অপূর্ব এ দৃষ্টান্ত।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা জানান, এ বছর জেলায় ৩০১টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে। তিনি বলেন, প্রতিমা বিসর্জন নিরাপদ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রণজিৎ দাশ জানান, আওহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখও মানুষের সমাগম হয়েছে।
জানা গেছে, সমুদ্র সৈকত ছাড়াও একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজু নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান-পূজার ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত হয়ে টানা সরকারি ছুটির কারণে এবার কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। শনিবার (২০ অক্টোবর) পর্যন্ত পর্যটকের চাপ থাকবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সমুদ্র সৈকতে বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু সৈকত এলাকায় সাড়ে ৪শ’ ফোর্স সৈকতের নিরাপত্তার কাজে মোতায়েন করা হয়েছে। যানজট নিরসনে সৈকতের কলাতলী থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে যানজট প্রতিরোধে জোরদার করা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৮
আরআর