ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রূপসা নদীর নৌকাবাইচে মাতলো খুলনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৮
রূপসা নদীর নৌকাবাইচে মাতলো খুলনা রূপসায় নৌকা বাইচে মেতেছেন খুলনাবাসী

খুলনার রূপসা নদী থেকে: বিকেল থেকেই থমথমে গুমোট মেঘলা আকাশ। সূর্যের তেজ নেই বললেই চলে। হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে রূপসা নদীর ঢেউরাও যেন আনন্দে মেতেছে। এমনই পরিবেশে রূপসা নদীর দুই পাড়ে মানুষের মিলন মেলা। আনন্দের উচ্ছ্বাস।

তরুণ-তরুণী, নারী, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এসেছেন গ্রামীণফোন আয়োজিত নৌকা বাইচ উপভোগ করতে। কেউ কেউ নৌকা ও ট্রলার ভাড়া করেছেন নদী ঘুরে বাইচ উপভোগ করেছেন।

রূপসা নদীর আশেপাশের এলাকাও মেতে উঠেছে প্রাণের উৎসবে। আবেগ-উত্তেজনার নৌকা বাইচ হয়ে উঠে আপামোর মানুষের নির্মল আনন্দের সপ্রাণ প্রতিভূ।

নৌকা বাইচের সময় মাঝিরা একত্রে জয়ধ্বনি সহকারে নৌকা ছেড়ে দিয়েই একই লয়ে গান গাইতে শুরু করেন এবং সেই গানের তালের ঝোঁকে ঝোঁকে বৈঠা টানেন। যার ফলে কারও বৈঠা ঠোকাঠুকি না লেগে এক সঙ্গে পানিতে অভিঘাত সৃষ্টি করতে থাকে। গায়েন বা পরিচালক কাঁসির শব্দে এই বৈঠার এবং গানের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করেন। অন্য সব নৌকাকে পেছনে ফেলে নিজেদের নৌকাকে সবার আগে যাওয়ার চেষ্টায় প্রয়োজন বোধে কেউ কেউ কাঁসির শব্দে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেন এবং সেই সঙ্গে গানের গতিও বেড়ে চলে। গানের মধ্যে অনেকে ‘হৈ হৈয়া’ শব্দ ব্যবহার করেন।

সারা দেশ থেকে আগত ২৪টি বাইচ দলের অংশগ্রহণে শনিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ১৩তম খুলনা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। নৌকার মাপের ওপর ভিত্তি করে বাইচগুলোকে তিনটি দলে ভাগ করা হয়। এবং প্রতিটি দল থেকে বিজয়ী ১ম, ২য় এবং ৩য় দল জিতে নেয় নগদ পুরস্কার।

এ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় খুলনায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। খুলনা ও এর আশে পাশের এলাকার লাখ লাখ মানুষ রূপসা নদীর দুই পাড়ে উপস্থিত থেকে এই বাইচ উপভোগ করেন।

রূপসায় নৌকা বাইচে মেতেছেন খুলনাবাসী এবারের প্রতিযোগিতায় কয়রা, পাইকগাছা, তেরখাদা, কালিয়া, নড়াইল থেকে নয়টি বড় এবং সাতটি ছোট বাইচ দল অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর এলাকার আটটি মাঝারি নৌকা নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল।

বড় দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে এক লাখ টাকা জিতে নেয় খুলনার কয়রার সুন্দরবন টাইগার। দ্বিতীয় হয়ে পুরস্কার হিসেবে ৬০ হাজার টাকা পান খুলনার তেরখাদার ভাই ভাই জলপরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ৩০ হাজার টাকা পান ঐ একই এলাকার আল্লাহ ভরসা।

ছোট গ্রুপে প্রথম হয়ে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পান খুলনার পাইকগাছার ভাই ভাই দুরন্ত। দ্বিতীয় বিজয়ী দল কয়রার সোনার তরী পায় ৩০ হাজার টাকা। আর তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পাইকগাছা, খুলনার দুরন্ত পায় ২০ হাজার টাকা।

বিশেষ মাঝারি দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে ৫০ হাজার টাকা জিতে নেয় খুলনার সোনাডাঙ্গার ফলিয়া এন্টারপ্রাইজ। দ্বিতীয় হিসেবে ৩০ হাজার টাকা পায় গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সোনার তরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ২০ হাজার টাকা পায় ঐ একই এলাকার মা-বাবার আশীর্বাদ।

সকালে এই আয়োজনকে ঘিরে মহানগরীতে আয়োজন করা হয় একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এই র‍্যালি উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে বিকেলে রূপসা ১ নং কাস্টম ঘাটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সভাপতি হিসেবে ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন। গ্রামীণফোনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির খুলনা সার্কেল বিজনেস হেড মো. আওলাদ হোসেন, হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং নাফিস আনোয়ার চৌধুরী, খুলনা সার্কেল মার্কেটিং হেড আবুল হাসনাত, খুলনা রিজিওনাল হেড আহসান হাবিবসহ অন্য কর্মকর্তারা। নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে উপস্থিত ছিলেন এর সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান রহিম, প্রধান উপদেষ্টা  শেখ আশরাফ-উজ-জামানসহ অন্যরা।  

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান, খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ।

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের মো. আওলাদ হোসেন বলেন, গ্রামীণফোন সবসময়ই বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষক। গ্রামীণফোন মনে করে যে একটি দেশের উন্নয়নে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিরাট ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে গ্রামীণফোন তাই সব সময় এ ধরনের অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা  শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে-এই স্লোগান নিয়ে আমরা র্দীঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আসুন নদীকে ভালোবাসি, নদীকে ভালো রাখি।

প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের উপ-পরিচালক বিল্লাল হোসেন খান, খুলনা সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রেজাউল করিম, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহ-সভাপতি নিজাম উর রহমান লালু, ও খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য মো. মোতালেব হোসেন মিয়া।

সন্ধ্যায় রূপসা ফেরি ঘাট চত্বরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পুরো আয়োজনটি খুলনা সিটি করপোরেশন, খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, নৌ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বন বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, রূপসা সেতু কর্তৃপক্ষ ও ট্রলার মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৮
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।