এর আগে গত শুক্র ও শনিবার হবিগঞ্জে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হন দুই শিক্ষক এবং এক নারী গ্রাম পুলিশ (সোমবার, ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস)।
এভাবে ট্রাফিক আইন না মেনে গাড়ি চালানো, লাইসেন্সবিহীন চালক, অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত না রাখা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সম্প্রতি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে নড়েচড়ে বসে সরকার ও প্রশাসন। তখন শুরু হওয়া ট্রাফিক সপ্তাহে সিলেটে ৩ হাজার ৭শ’ ৫৮টি পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা ও প্রায় ২২ লাখ টাকা জরিমানা করে পুলিশ। কিন্তু স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় লাইসেন্সবিহীন চালকরা ফের রাস্তায় নেমেছেন। আর অভিযানকালে আত্মগোপনে রাখা ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোও এখন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান মতে, শুধু সিলেটে রেজিস্ট্রেশনকৃত এক লাখ ১৪ হাজার যানবাহনের মধ্যেই লাইসেন্সবিহীন চালক রয়েছেন ৪৪ হাজার। আর ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলছে প্রায় ২০ হাজার। রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী যানবাহন রয়েছে প্রায় ৬ হাজারের বেশি। আর অভিযোগ রয়েছে, অপরাধ করেও আইন প্রয়োগকারী ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই পার পেয়ে যান চালকরা।
এ ব্যাপারে সিলেট বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক এ কে এম মাহবুবুল কবীর বলেন, দুর্ঘটনারোধে সব সময়ই সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ও লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়। কেবল ট্রাফিক আইন মানলেই দুর্ঘটনারোধ সম্ভব।
তিনি বলেন, সিলেট বিআরটিএ-তে এক লাখ ১৪ হাজার রেজিস্ট্রেশনকৃত যানবাহন চলছে। রেজিস্ট্রেশনকৃত গাড়িগুলোর মধ্যে সর্বাধিক মোটরসাইকেল ৬৫ হাজার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ২০ হাজার এবং অন্যান্য যানবাহন ২৯ হাজার।
এছাড়া ২০ হাজার ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলছে। আর ৬ হাজার যানবাহন রয়েছে রাস্তায় চলার অনুপযোগী। এর বাইরে অনুমোদনহীন অটোরিকশা কয়েক হাজার চলাচল করছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। এর বাইরেও প্রতি শনিবার স্কাউটদের নিয়ে ট্রাফিক ক্যাম্পেইন চালানো ও যানবাহনের বিরুদ্ধে জরিমানা অব্যাহত রাখা হয়েছে। একেকটি গাড়িকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে, ফিটনেসবিহীন অসংখ্য গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে। আর সড়ক দুর্ঘটনারোধে ট্রাফিক পুলিশের সচেনতা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সিলেট অফিসের তথ্য মতে, সিলেটের চার জেলায় (বিআরটিএ) রেজিস্ট্রেশন রয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৬ যানবাহনের। এরমধ্যে লাইসেন্সধারী চালক রয়েছেন ৯৩ হাজার ৭০২ জন। সে হিসেবে লাইসেন্সধারী চালকের তুলনায় রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত গাড়ির সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৯৮ হাজার বেশি।
সূত্রে জানা যায়, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ-এ বিআরটিএ কার্যালয় থাকলেও মূলত; সিলেট কেন্দ্রিক কার্যক্রম সর্বাধিক। পুরো বিভাগে এক লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৬টি রেজিস্ট্রেশনকৃত গাড়ির মধ্যে শুধু সিলেট বিআরটিএতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত গাড়ি এক লাখ ১৪ হাজার। বাকি তিন জেলায় মোট রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত গাড়ি ৭০ হাজার ৫৭০টি। একইভাবে সিলেট বিভাগের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৯৩ হাজার ৭০২ জন চালকের মধ্যে সিলেট বিআরটিএ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার চালক।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক বাংলানিউজকে বলেন, বাস-মিনিবাসে লাইসেন্সবিহীন কোনো চালক নেই। লাইসেন্স না থাকলে কোনো চালককে গাড়িতে উঠতে দেওয়া হয় না। কিন্তু ছোট গাড়িগুলোতে লাইসেন্সবিহীন চালক বেশি। দক্ষতা বিবেচনা করে চালকদের লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্র আরো সহজ করার দরকার মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৮
এনইউ/জেডএস