এবারই প্রথম মুন্সিগঞ্জে জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২০ কেজি করে চাল দিচ্ছে সরকার। জেলায় তিন হাজার ৬৭১ জন জেলের পরিবার চাল সহায়তা পাবে।
তবে মৎস্য কর্মকর্তাদের দাবি, চাল পাওয়ার বিষয়ে অনেক জেলেই জানেন না। চাল না পেয়ে বাধ্য হয়ে ইলিশ ধরছেন তাও না। এছাড়া বরাদ্দ আসার পর ধাপে ধাপে বিভিন্ন কাজ শেষ হতে সময় ব্যয় হয়। সরকার মৌসুম শুরুর আগে বরাদ্দ পাঠালে জেলেরা উৎসাহ পেয়ে নদীতে ‘মা’ ইলিশ ধরতো না বলেও জানান একাধিক কর্মকর্তা।
জানা যায়, বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতরের সরকারি ওয়েবসাইটে চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলাকে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। মুন্সিগঞ্জের ৯ হাজার ৮১৩ জন মৎসজীবীর মধ্যে প্রায় তিন হাজার জেলে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মুন্সিগঞ্জের ছয়টি উপজেলায় ৭৩ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মুন্সিগঞ্জসহ ২৯টি জেলায় তিন লাখ ৯৫ হাজার ৭০৯ জন জেলেকে ৭৯১৪ দশমিক ১৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। মুন্সিগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোতেও এখনো চাল বিতরণ শুরু হয়নি।
মুন্সিগঞ্জের পদ্মা-মেঘনার জেলেরা জানান, এবার নদীতে ইলিশ অনেক বেশি। তাই জাল ফেললেই মাছ আর মাছ। তবে লোভী ও অসাধু অনেক জেলেই আইন অমান্য করে ‘মা’ ইলিশ শিকার করছেন। জেলেরা কখনো অলস বসে থাকতে পারে না। ২২ দিন বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় ধার-দেনা করে পরিবারগুলো চলছে। প্রজনন মৌসুমে শুরুর আগে বরাদ্দ পেলে জেলেরা উৎসাহ পেতো। কিভাবে জেলেরা জীবনযাপন করছেন তা দেখতে কোনো জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেখা যায়নি। জেল-জরিমানা করা হয়েছে অনেক জেলেদের।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির জেলা শাখার প্রতিনিধি ও মুন্সিগঞ্জ জেলা মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আমানউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাল বিতরণের বিষয়ে বলা হলে তারা ব্যস্ত থাকার কথা বলেন। এবারই প্রথম ইলিশ শিকার বন্ধে বরাদ্দ এসেছে। এরআগে কখনো জেলেরা চাল পায়নি। তবে নিয়ম হচ্ছে অভিযান শুরুর আগে বরাদ্দ দেওয়ার। জেলেদের আগে চাল দেওয়া হলে অধিকার নিয়ে নিষেধ করা যায়। অনেক অসাধু ও লোভী জেলেরা আইন না মেনে মাছ শিকার করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনেক জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ জেলেই ধার-দেনা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাসির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এবার সদর উপজেলার এক হাজার ১৬৪ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথম জেলায় বরাদ্দ আসছে। বর্তমানে জেলেদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। জেলেদের জন্য ২০ কেজি চাল সামান্য, তাই বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বরাদ্দটি জেলা প্রশাসন থেকে ১৮ অক্টোবর সাক্ষরিত হয়ে সোমবার (২২ অক্টোবর) এখানে এসেছে। পাঁচ বছর আগে জেলেদের আইডি কার্ড দিয়ে নিবন্ধন করা হয়। উপজেলায় মোট দুই হাজার ৮শ’ জন জেলে থাকলেও বাছাই করে ইলিশ শিকার করা জেলেদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। বর্তমানে জেলেদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে।
লৌহজংয়ের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইদ্রিস তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার বরাদ্দের কাগজ পাওয়া গেছে। তালিকা তৈরি করে এক সপ্তাহের মধ্যেই চাল বিতরণ করা হবে। লৌহজংয়ের পদ্মানদীর ৬৪৬ জন জেলেকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে। ইলিশ শিকার বন্ধের আগে চাল বিতরণ করা গেলে জেলেরা উৎসাহ পেতো। জেলেদের তখন দায়বদ্ধের একটি বিষয় থাকতো। যদি এ ২২ দিন জেলেদের বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে ভালো হতো।
গজারিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসলাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গজারিয়া উপজেলায় এবার জেলেদের চাল বিতরণের জন্য ৯০০ ভিজিএফ কার্ড এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদে জেলেদের তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই বাকি কার্যক্রম শেষে চাল বিতরণ করা হবে। আশাকরি আগামী বৃহস্পতিবারের (২৭ অক্টোবর) মধ্যেই জেলেরা চাল পাবেন। জেলেরা মূলত নানা অজুহাত দেখিয়ে মাছ শিকার করেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মাসের শুরুতেই বরাদ্দ আসছে। জেলেদের শিগগির চাল দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী অভিযান শুরুর আগেই জেলেদের চাল বরাদ্দ দেওয়া। তবে জেলেরা চালের আশায় বসে নেই। এছাড়া চাল দেওয়া হলে মাছ শিকার করবেন না এমনও নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
জিপি