প্রায় ১৮ বছর আগে সামুদ্রিক তীব্র জোয়ারের ভাঙনে মেরিন ড্রাইভের কলাতলী অংশ বিলীন হয়ে গেলে এ মহল্লার ভেতরের সোয়া কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ সড়কটিকে মেরিন ড্রাইভের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
কিন্তু গত বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে এই সংযোগ সড়কটিতে ব্যাপক খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণকারী পর্যটকদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রায় এক হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি গত বছরের ৬ মে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে সমুদ্র এই সড়কটিকে করেছে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি দেশি-বিদেশি পর্যটক সড়কটিতে ভ্রমণ করেন।
আর এই সড়কটিতে ভ্রমণ করতে হলে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর একটি সংকীর্ণ সড়ক দিয়ে মেরিন ড্রাইভে যেতে হয়। প্রায় ১৮/১৯ বছর আগে সামুদ্রিক তীব্র জোয়ারের ভাঙনে মেরিন ড্রাইভের কলাতলী অংশ ধীরে ধীরে সাগরে বিলীন হয়ে গেলে সেটি আর পুনরায় নির্মিত হয়নি।
এর পরিবর্তে কলাতলী মহল্লার ভেতরের সোয়া কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ সড়কটিকে মেরিন ড্রাইভের অংশ হিসাবে গড়ে তোলা হয়। কিন্তু গত বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে এই সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিপজ্জনক এ সড়কে একটু অসতর্ক হলেই ঘটে দুর্ঘটনা।
এ কারণে এই সড়কটিতে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। দুই মিনিটের রাস্তা এখন পার হতে ১০ থেকে ২০ গুণ সময় লাগে। আর এ কারণে মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণের আনন্দ কলাতলীতে এসে ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন পর্যটকরা।
তাদেরই একজন সাংবাদিক নাসিম আনোয়ার। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ গড়ে তুলেছে। সড়কটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আর এ কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সড়কটিতে ভ্রমণে যান। আমিও গিয়েছিলাম। কিন্তু টেকনাফ থেকে কক্সবাজার কলাতলীতে এসে আমার ‘রুচিই’ নষ্ট হয়ে গেছে।
কলাতলীর বাসিন্দা মাস্টার মোহাম্মদ ছৈয়দ নূর জানান, প্রতিদিন এ সড়কটিতে কমপক্ষে ৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটে ভয়াবহ দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামও। এ কারণে টমটম, সিএনজি অটোরিকশাসহ কোনো পাবলিক পরিবহন এ সড়কে এলে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে।
সড়কটির কারণে পর্যটননগরী কক্সবাজারে সরকারের উন্নয়ন অর্জন ম্লান হতে চলেছে বলে মনে করেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান।
তিনি জানান, গত জানুয়ারিতে সড়কটি উন্নয়নের জন্য পৌরসভার ১৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। পরে গত মাসে পৌর মেয়র ২৮ কোটি টাকার আরো দুটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনও সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়নি।
তবে কিছু জটিলতার কারণে সড়কটির উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে জানিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, শিগগির সড়কটির উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। এছাড়া বিধ্বস্ত মেরিন ড্রাইভটিও পুনরায় নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৮
এমএ/