ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যন্ত্রণায় মেয়েটি কেঁদে উঠলে হাসতো শাহেনী!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৮
যন্ত্রণায় মেয়েটি কেঁদে উঠলে হাসতো শাহেনী! বাঁয়ের ছবিতে শাহেনী, ডানে নির্যাতিত শিশু। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ফেনী সদর উপজেলার শর্শদীতে শিশু প্রিয়াঙ্কাকে নির্যাতনকারী শাহানা আক্তার শাহেনীকে আটক করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শর্শদী এলাকার একটি জঙ্গল থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।

এর আগে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।

এসময় পুলিশ মেয়েটির ওপর নির্যাতনের আলামত খুঁজে পায়। এবং একটি ঘরে কয়েকটি জায়নামাজ (নামাজের বিছানা) দেখতে পায়।  

আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শাহেনী দোষ স্বীকার করে বলেন, তার ওপর জ্বিন ভর করতো সেসময় প্রিয়াঙ্কার শরীরে আগুনের ছ্যাকা দিলে জ্বিন চলে যেত। আর সে কারণেই তাকে তিনি আগুনের ছ্যাকা দিতেন।  

তিনি আরো জানান, বাংলা চলচ্চিত্রের ৪৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বিগত ৪ বছর তিনি অভিনয় থেকে দূরে সরে এসেছেন।  

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, মেয়েটি ওই এলাকার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহেনী বেগমের বাসায় থাকতো। শাহেনী পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে এ বাড়িতে আসতেন।  নির্যাতনের শিকার প্রিয়াঙ্কা।  ছবি: বাংলানিউজঅপরদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, মেয়েটির গায়ে আগুনের ছ্যাকা দিয়ে জ্বিন তাড়ানোর নামে প্রতারণা করতো তারা।  

শর্শদী এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শাহেনী তার বোন, বাংলা চলচ্চিত্রের অশ্লীল যুগে পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী ছিল সে। বেপরোয়া জীবন যাপনের কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শাহেনী। স্বামীর সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই।  

এদিকে, ফেনী সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত ফয়জুল কবির বলেন, শিশুটির শরীরে অসংখ্য পোড়া ক্ষতস্থান রয়েছে। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। যেহেতু মেয়েটির কোনো স্বজন নেই সেহেতু মেয়েটির দেখাশোনা করছে স্বেচ্ছসেবী সংগঠন ‘সহায়’।  

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) দিনগত রাতে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৫ বছর বয়সী শিশু প্রিয়াঙ্কার পুরো শরীর ঝলসানো। তার চিৎকারে হাসপাতাল যেন প্রকম্পিত হচ্ছিল।  

জানা যায়, মেয়েটির শরীরে মোমবাতির আগুন দিয়ে ছ্যাকা দেওয়া হতো। সে চিৎকার করে কাঁদলে হাসতো অভিনেত্রী শাহানা আক্তার শাহেনী। মনে হচ্ছিল মেয়েটির প্লাস্টিকের শরীর, মোমবাতির আগুনে ছিদ্র হয়ে গেছে।  

এর আগে মঙ্গলবার দুপরে শিশুটিকে কাঁদতে দেখে জোহরা নামে এক নারী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।  

জোহরা আক্তার জানান, ওই দিন দুপুরে শর্শদী ইউনিয়নের এলাকার পাঠান বাড়ি সংলগ্ন একটি সড়কে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে কাঁদতে দেখে তাকে বাড়ি নিয়ে যান। পরে স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শে তাকে আধুনিক ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করান তারা। মেয়েটি তার নাম প্রিয়াঙ্কা ও মায়ের নাম শাহেনী ছাড়া আর কিছু বলতে পারেনি।  পুলিশের হাতে আটক শাহেনী।  ছবি: বাংলানিউজখবর পেয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ছুটে যান। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল ও ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) আবুল কালাম আজাদ। এসময় পুলিশ সুপার ঘোষণা করেন যত শিগগির সম্ভব নির্যাতনকারীকে গ্রেফতার করা হবে। পরে অভিযান চালিয়ে রাত ১২টার দিকে শর্শদী এলাকার একটি জঙ্গল থেকে তাকে আটক করা হয়।

** ফেনীতে মেয়ে শিশুর উপর নির্মম নির্যাতন

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৮
এসএইচডি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।