কিন্তু এখানে ভর্তি হয়ে সমস্যা যেনো আরও বেড়ে যায় তার। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিন্নাতকে যে খাবার দেওয়া হয়, তার কাছে সেটি খুবই কম।
হাসপাতাল পরিচালক বিষয়টি জানার পরই তার খাবারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেন। যদিও এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে খাবার পরিবেশন বিভাগে কর্মরত পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, পরিচালক স্যার আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন জিন্নাতের পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে। এ নির্দেশে এখন থেকে প্রতি বেলায় ছয় জনের খাবার দেওয়া হবে তাকে। যা প্রতিদিন ১৮ জনের সমান। একইসঙ্গে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি।
জিন্নাতের বর্তমান উচ্চতা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে না থাকলেও তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষ তুরস্কের সুলতান কশেন। ১৯৮২ সালে জন্ম নেওয়া কশেনের উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ২০০৯ সালে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তির স্বীকৃতি দেয়। আর জিন্নাত সেই কশেনের চেয়েও তিন ইঞ্চি লম্বা।
বর্গা চাষি আমির হামজার ছেলে জিন্নাত বুধবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রীকে বলেন নিজের সমস্যার কথা। কক্সবাজার-৩ আসনের সরকার দলীয় এমপি সাইমুর সরওয়ার কমল তাকে এ সু্যোগ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। সে অনুযায়ী বিএসএমএমইউতে তার সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জিন্নাতের বড় তাই ইলিয়াস বাংলানিউজকে বলেন, জিন্নাতের চিকিৎসার জন্য টাকা দেওয়াটা আমার স্ত্রী সহ্য করতে পারতো না। সে বাড়ি থেকে চলে গেছে, এতে কোনো দুঃখ পাইনি আমি। এরপরও আমার সাধ্যমতো ভাইয়ের চিকিৎসা করিয়েছি। এলাকার মানুষ আমাকে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে এমপি সাইমুর সরওয়ার কমল আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন। হাসপাতালে এনেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। হাসপাতালে খাবার সমস্যা ছিল, সেটার সমাধান হয়েছে। এসময় দেশবাসীর কাছে ভাইয়ের সুস্থ চেয়ে দোয়া চান ইলিয়াস।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইলিয়াছ বিশেষজ্ঞ চিকৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হরমোন ও থাইরয়েডের সমস্যার কারণে জিন্নাত অস্বাভাবিকভাবে লম্বা হয়ে গেছে।
তার মা শাহপুরী বেগম। তারা তিন ভাই, এক বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে জিন্নাত তৃতীয়। অভাবের সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম তার ভাই ইলিয়াস। আর ১৪ বছর থেকে জিন্নাতের শরীর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে কাজ করা হয়ে উঠেনি তার।
বাংলানিউজকে জিন্নাত আলী বলেন, আমি আতপ চালের ভাত খাই, যেটা এখানে নেই। তাছাড়া এখানে রান্নার মানও ভালো না।
তবে পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ার কথা শুনে হাসি দেখা গেলো তার মুখে। সঙ্গে গিনেস বুকে তার নাম ওঠানোর চেয়ে নিজের সুস্থতাই বেশি জরুরি বলে মনে করেন জিন্নাত।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০১ ঘন্টা, অক্টেবর ২৫, ২০১৮
ইএআর/এমএমএস