আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতির পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণীত হবে।
ইশতেহারে ব্লু –ইকোনোমি (সমুদ্র অর্থনীতি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, যুব সমাজকে শিক্ষিত ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত করার বিষয় ইশতেহারে তুলে ধরা হবে।
এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মেগা প্রকল্পগুলোকেও ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য এসব বিষয় আগামী দিনে সরকারের অগ্রাধিকার কাজ হিসেবে ইশতেহারে উল্লেখ থাকবে।
এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম, অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. অনুপম সেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অর্থনীতিবিদ, পেশাজীবীরা রয়েছেন।
ইশতেহারে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। কমিটি ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে বলেও আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান।
এবারের ইশতেহারে কোন বিষয়গুলোকে প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, অনেক বিষয়ই ইশতেহারে আসবে। খাদ্য নিরাপত্তা, যেমন মানুষের ক্ষুধা নেই কিন্তু পুষ্ঠি সমৃদ্ধ ও মান সম্পন্ন খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে শিক্ষার অনেক প্রসার হয়েছে। আমাদের সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। মানুষ গড়ার জন্য শিক্ষাকে মানসম্মত ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার প্রয়োজন। এ বিষয়গুলোকে ইশতেহারে প্রধান্য দেওয়া হবে। আমাদের দলের ঘোষণাপত্রে যে বিষয়গুলো রয়েছে তার আলোকেই ইশতেহার তৈরি হবে।
এদিকে ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত প্রায় ১০ বছরে সরকারের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই দেশ খাদ্যে স্বংয়সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এখন জরুরি কাজ হচ্ছে পুষ্টি নিশ্চিত করা। পুষ্টির যোগান বাড়ানো। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে এবং জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শিক্ষিত যুবসমাজ। এই যুবসমাজকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়- সে বিষয়েও ইশতেহারে দিকনির্দেশনা থাকবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার মান বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
মিয়ানমার ও ভারতের কাছ থেকে সমুদ্রসীমার বিজয় লাভের পর সমুদ্রের বিশাল জলরাশির অধিকারী হয়েছে বাংলাদেশ। এই সমুদ্রসীমায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদকে ব্লু –ইকোনোমি (সমুদ্র অর্থনীতি) বলা হচ্ছে। এই সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে তুলে ধরা হবে।
সূত্র আরও জানায়, টেকসই উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন জরুরি। আগামীতে এ খাতকে আরও গুরুত্ব দিয়ে এ খাতের উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে ইশতেহারে ঘোষণা থাকবে। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারের দুই মেয়াদে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এখন এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন) ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
অনুরূপভাবে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসডিজি নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপের দিক-নির্দেশনা আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে। সেই সঙ্গে আগামী ১০০ বছর পর বাংলাদেশ কেমন হবে সে জন্য ডেল্টা প্ল্যানের কথা বলা হচ্ছে। ইশতেহারে এসব বিষয় তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ