২০১৬ সালে কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। যেখানে বাংলাদেশ-চীন যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু করে।
আর অধিগ্রহণের ফলে ভিটে-মাটি হারানো মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয় সেমিপাকা আধুনিক সুবিধা সংবলিত ঘর। যা সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে যেতে যাচ্ছে ওইসব পরিবারের কাছে।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারগুলোর হাতে ঘরের চাবি তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কলাপাড়ায় আসছেন। আর এ আগমনকে কেন্দ্র করে সর্বত্রে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সেইসঙ্গে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কলাপাড়া পৌর শহরে প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করছেন এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে মিটিং করছেন।
ধানখালী ইউনিয়নে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০০ গজ পশ্চিমে লোন্দা গ্রামে ১৬ একর জমির ওপর এই স্বপ্নের ঠিকানা পুনর্বাসন পল্লীর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এখানের সেমিপাকা ঘরগুলো দুই ধরনের ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছে। যে সকল পরিবারের বেশি জমি এবং বসত বাড়ি অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে, সে সকল পরিবারের জন্য সাড়ে সাত শতক জমিতে এক হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের ৮২টি ঘর। এছাড়া যাদের কম ক্ষতি হয়েছে, তাদের জন্য সাড়ে পাঁচ শতক জমিতে এক হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ঘর ‘এল’ টাইপের। ঘরের প্রত্যেকটিতে ১৫ দশমিক সাত ফুট আয়তনে বাথরুমসহ একটি মাস্টার বেডরুম ছাড়াও আরও দুইটি ১৫ ফুট আয়তনের বেডরুম রয়েছে। ১০ দশমিক চার ফুট আয়তনের একটি ডাইনিংরুম। ১২ দশমিক দুই ফুটের রান্নাঘর। এছাড়া একটি কমন বাথরুম রয়েছে। সামনের বারান্দা লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো রয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরের সামনে একটি খালি জায়গা থাকছে, যেখানে শাক-সবজি চাষাবাদ কিংবা গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালনের সুযোগ থাকছে।
এ পল্লীতে ৩৬ হাজার ৯২৯ এবং ২৪ হাজার ৫৫৪ বর্গফুট আয়তনের দু’টি পুকুর খনন করা হয়েছে। যার উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত ঘাটলা করা হয়েছে। চারদিকে বসার ব্যবস্থাও রয়েছে। ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ পুনর্বাসন পল্লীতে নিরাপদ পানির জন্য ৪৮টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। দ্বিতল এবং দৃষ্টিনন্দন মসজিদ করা হয়েছে। দ্বিতল কমিউনিটি সেন্টার করা হয়েছে। নিচতলায় থাকবে ক্লিনিক। এই কমিউনিটি সেন্টারের আয়তন ৪০০ বর্গমিটার। রাখা হয়েছে- খেলার মাঠও। সাতটি দোকান নিয়ে একটি শপিং সেন্টার করা হয়েছে। হয়েছে কাঁচাবাজারও। রয়েছে ঈদগাহর মাঠ। দ্বিতল একটি স্কুল ভবন করা হয়েছে। যেখানে টেকনিক্যাল শাখার অগ্রাধিকার থাকবে। স্বপ্নের ঠিকানার সন্তানরা কারিগরি শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাবে। ভেতরের পানি নিষ্কাশনের সাড়ে চার কি. মি. ড্রেনসহ ১২ ফুট প্রশস্ত দুই কিলোমিটার সড়ক করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কবরস্থান করা হয়েছে। দূর থেকে দেখলে এই পল্লী এখন নজরকাড়ে অন্যদেরও। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধাও থাকছে। নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এখান থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে দশমিক তিন পয়সা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জীবনমানের উন্নয়নে ব্যয় হবে।
নিশানবাড়িয়া গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ তৈয়ব আলী ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাপ-দাদার ভিটা-জমি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকার নিয়ে গেছে। ভাবছিলাম এই বুঝি পথে বসে গেলাম। কিন্তু এখন জেনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বসবাসের জন্য ঘর নির্মাণ করেছেন। সেই ঘরে আমি ও আমার বৃদ্ধা স্ত্রী থাকতে পারবো।
স্বপ্নের ঠিকানায় চাবি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা মজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আবাসনের ঘর ও পরিবেশ দেখে খুব খুশি হয়েছি। তবে এর পাশাপাশি প্রতি পরিবার থেকে অন্তত একজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
কলাপাড়ার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, পুনর্বাসন পল্লীর সঙ্গে মূল ওয়াপদা সড়কের সঙ্গে একটি সংযোগ সড়ক করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সড়কটি ১৬ ফুট প্রশস্ত হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের যথাযথভাবে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে পুনর্বাসন পল্লীর আশপাশ এলাকার সকল মানুষের মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পটুয়াখালীতে চলমান উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের আওতায় অনেক ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে শঙ্কায় না পড়েন, সেজন্য এ প্রকল্পটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৮
এমএস/টিএ