ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভাঙচুরে বাধা দেয়ায় লিমনকে মারপিট, হাসপাতালে ভর্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৮
ভাঙচুরে বাধা দেয়ায় লিমনকে মারপিট, হাসপাতালে ভর্তি

সাভার (ঢাকা): সাভারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মালিকানাধীন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবনের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট, মারধরসহ নারী শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙচুর-মারধরে বাধা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. লিমন হোসেনকে বেধড়ক পিটিয়ে তার ডান হাত ভেঙে দিয়েছে বহিরাগতরা।

শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১১টায় আশুলিয়ার মির্জানগর এলাকায় পিএইচএ ভবনে লিমনকে পিটিয়ে আহত করার পর তাকে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মির্জানগর এলাকায় ১৫ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পিএইচএ ভবন অবৈধভাবে মালিকানা দাবি করে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেড নামের ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় বহিরাগতরা।

সেসময় হামলাকারীরা পিএইচএ ভবনের বিভিন্ন কক্ষে থাকা কম্পিউটার, টিভি, মনিটর, রাউটার, মাইক্রোফোন ও জানালার কাচও ভেঙে ফেলে।

সন্ত্রাসী হামলায় আহত শিক্ষার্থী লিমন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ এবং তাদের ভাড়াটে লোকজন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এসময় তারা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি নিজেদের দাবি করে বেশ কিছু গাছ কেটে জমিতে তাদের প্রতিষ্ঠানের একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। প্রথমে এ ঘটনার ভিডিও করতে গেলে সন্ত্রাসীরা আমাকে বাধা দেয়। পরে আমি সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে আসি। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হোস্টেলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে লাঞ্ছিত করারও চেষ্টা করে। আমি প্রতিবাদ করায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে প্রথমে চড়-থাপ্পড় মেরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। তখন স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।  

ঝালকাঠিতে র‌্যাবের গুলিতে এক পা হারানোর পর দীর্ঘদিন আইনি লড়াই ও চিকিৎসা শেষে লিমন এই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার্থে ভর্তি হন। তিনি আরও বলেন, এখানে চিকিৎসকরা হাতের এক্সরে করে দেখেছেন আমার ডান হাতের কনুই থেকে ভেঙে গেছে। আমি এখনও গণস্বাস্থ্য হাসপাতালেই ডা. তারেকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছি। সন্ত্রাসীরা একটি সাইনবোর্ড নিয়ে জমি দখল করতে এলেও তারা প্রত্যেকেই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং একাধিক মামলার আসামি।

গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. তারেক হাসান বাংলানিউজকে বলেন, লিমনের হাতে-পায়ে, পিঠে, কানে-মুখেসহ সারা শরীরেই আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকজন মিলে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করায় তার ডান হাতের কনুইতে বেশ ব্যথা পেয়েছে। বর্তমানে তার হাতটি প্লাস্টার করে রাখা হয়েছে, যা কিছুদিন পর খুলে দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।  

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মর্তুজা আলী বাবু বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে এবং গাছপালা কেটে জমি দখলের চেষ্টা করেছে। এছাড়া ছাত্রীদের হোস্টেলে ঢুকে তাদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ করায় লিমন হোসেন নামে এক ছাত্রকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে।  

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ’র পরিচালক অনিল কুমার ভৌমিক অভিযোগ করেন, শুক্রবার সকালে পিএইচএ ভবনের অবৈধ মালিকানা দাবি করে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেড নামের ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা ও মির্জানগর এলাকার দ্য কটন টেক্সটাইল মিলের চেয়ারম্যান কাজী মহিবুর রবের ভাড়াটে লোকজন। এসময় ভবনে ভাঙচুর, মূল্যবান মালামাল লুট, হোস্টেলে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের মারধরের পাশাপাশি গাছপালাও কেটে ফেলে সন্ত্রাসীরা। তাদের বাধা দিতে গেলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করতে গেলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি পুলিশ।  

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক দীপু বাংলানিউজকে বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। একটি জমির মালিকানা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিলো। তবে এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি।  

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি, প্রাণনাশের হুমকি, মারপিট, লুট, মাছ চুরিসহ নানা অভিযোগে এখন পর্যন্ত আশুলিয়া থানায় পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি মামলায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন।  

এছাড়া গত মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেডের কারখানায় একযোগে অভিযান চালান র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান দু’টিকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি সিলগালা করে দেওয়া হয় গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিকেলসের অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন ইউনিট।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।