সেখানে আবার ধুলার স্তর। স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল বা ছাদের কোথাও বাসা বেঁধেছে মাকড়সা।
অন্যদিকে, ছাদ ছুঁয়ে পড়ে পানি। সে পানি জমেছে মেঝেতেও। এই কক্ষে আসবাব বলতে দু’টি টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার।
এখানে বসেই কোন ট্রেনে কতোজন যাত্রী ছিলেন, এমন তথ্য লম্বা রুল টানা রেজিস্ট্রার খাতায় তুলছেন ‘ট্রেনস ক্লার্ক’ শামীম মিয়া।
একেতো ডিজিটালাইজেশনের সময় এখন। তারমধ্যে অ্যানালগেরও প্রথম স্তরের স্টাইল ধারণ করে চলছে ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশনের ‘ট্রেনস অফিস’। শুধু তা-ই নয়, অফিসটিতে ছয়জনের কাজও সামলাতে হয় শামীমসহ দু’জনকে।
ট্রেনের হিসাব-নিকাশ রাখার এই কক্ষটি দেখে খটকা না লেগে উপায় নেই। পুরো কক্ষজুড়ে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারও নেই। এমনকি এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে ফোন করার জন্য টেলিফোন পর্যন্ত নেই।
কোনো রকম অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ছাড়াই কাজ চলছে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের ‘ট্রেনস অফিস’র।
সম্প্রতি জংশনটি ঘুরে এমন চিত্র দেখা ছাড়াও জানা যায়, প্রায় সাত বছর ধরে এখানে ট্রেনস ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন শামীম।
নানা সমস্যায় ধুঁকতে থাকা এই অফিসটির জীর্ণদশায় আক্ষেপ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ব্যবহার করার অনুপযোগী এই কক্ষটির সংস্কার কাজের জন্য স্থানীয় পূর্ত বিভাগকে তাগাদা দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
শামীমের সঙ্গে কথা বলার সময়ই ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ফাঁড়ি’র সিপাহী জয়নাল আবেদিন কক্ষটির করুণ দশা তুলে ধরে বলেন, ‘এই দেখুন ভাই ছাদ ছুঁয়েই পানি পড়ে। পুরো মেঝেতে এক প্রকার জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে গেছে। ছবি তুলে একটু লিখলে আমরা যদি নতুন একটি কক্ষ পাই আর কি। ’
জানা গেছে, এই অফিসে জনবল সংকটও প্রকট আকার নিয়েছে। কোন বগির কতো নম্বর, ইয়ার্ডে কতোগুলো বগি আছে এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন ট্রেন নাম্বার ট্রেকাররা (টিএনটি)। কিন্তু এই পদটিতে এখানে ১২ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র দুইজন। ফলে অতিরিক্ত সময় নিয়ে ১২ জনের কাজ সামাল দিতে হচ্ছে তাদের।
প্রয়োজনীয় জনবল নেই ট্রেনস ক্লার্ক পদেও। ট্রেন নাম্বার ট্রেকাররা সব রকম তথ্য পৌঁছে দেন ট্রেনস ক্লার্কের কাছে। পরবর্তীতে তারা সেটি রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করেন। এই পদেও ছয়জনের জায়গায় রয়েছেন মাত্র দু’জন।
এমন সীমিত জনবল নিয়ে ময়মনসিংহ রেল জংশনের ট্রেনের বগি, যাত্রীর হিসাবের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন হেড ক্লার্ক মো. শাহজাহান। সঙ্গে শূন্য রয়েছে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের পদটিও।
এসব সমস্যার বিষয়ে হেড ক্লার্ক শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, লোকবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুই থেকে তিন মাস আগেও একবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোন সাড়া পাইনি।
নিজেদের কক্ষের নানা সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, পূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলীকে ময়মনসিংহ রেল জংশনের সুপারিনটেনডেন্ট চিঠি দিয়েছেন। তারা বলছেন, এই ভবন মেয়াদোত্তীর্ণ। পুরো ভবন ভেঙে নতুন করে করতে হবে। এখানে মেরামত বা সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই।
কবে নাগাদ ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে এ সম্পর্কে জানতে রেল জংশনটির সুপারিনটেনডেন্ট জহিরুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৮
এমএএএম/টিএ