এখন এর সমাধান একমাত্র রাষ্ট্রপতির হাতে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বারবার আরপিও বিলের সমাধানের কথা বলে আসছে।
আগামী নির্বাচনে ইভিএম-এর ব্যবহার করতে হলে হয় বিলটি সংসদে পাস করাতে হবে নতুবা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় অথবা অধিবেশনকাল না থাকলে কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে বলে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলে মনে করবেন সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করতে পারবেন এবং জারি হওয়ার সময় হতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের মতই ক্ষমতাসম্পন্ন হবে।
তবে শর্ত থাকে যে, এই আইনের (২) অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত কোনো অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে তা উত্থাপিত হবে এবং ইতোমধ্যে বাতিল না হলে অধ্যাদেশটি অনুরূপভাবে উত্থাপনের পর ৩০ দিন অতিবাহিত হলে কিংবা অনুরূপ মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে পূর্বে তা অননুমোদন করে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হলে অধ্যাদেশটির কার্যকারিতা লোপ পাবে।
বর্তমান সরকারের শেষ অধিবেশন অর্থাৎ ২৩তম অধিবেশন সোমবার (২৯ অক্টোবর) শেষ হচ্ছে- এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, চলতি অধিবেশনে পাসের জন্য ইতোপূর্বে ১৯টি বিল পাওয়া গেছে। বিলগুলো পাসের জন্য এরই মধ্যে সংসদের অধিবেশন তিন দিন বাড়ানো হয়েছে। সোমবার এই অধিবেশন শেষ হচ্ছে। ফলে সোমবার কোনো বিল সংসদে আসলেও তা অধিবেশনে উত্থাপন করা সম্ভব, তবে তা পাস করা সম্ভব নয়। একটি বিল পাসের জন্য সংসদকে অন্তত তিন দিনের সময় দিতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত নতুন করে অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। আর প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছি না। এ ধরনের কোনো সুপারিশও আসেনি।
কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী, সরকারি বিল সংসদে আসার পর তা স্পিকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করা হয়। এরপর বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কমিটির সুপারিশসহ বিলের প্রতিবেদন সংসদ অধিবেশন উত্থাপন করা হয়। এরপর বিলটি পাসের জন্য সংসদ অধিবেশনের কার্যতালিকাভুক্ত করা হয়।
কার্যতালিকা অনুযায়ী সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনার মাধ্যমে বিলটি পাস হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কার্যপ্রণালী বিধির ত্রয়োদশ অধ্যায়ে বিল উত্থাপনের ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের ৭ দিনের নোটিশ দেওয়ার বিধান থাকলেও বিশেষ জরুরি ক্ষেত্রে ওই বিধি স্থগিত করে স্বল্প সময়ে বিলটি উত্থাপন করতে পারেন। তবে বিল পাসের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
এদিকে রোববার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রীআনিসুল হক বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সভায় এটা যদি অ্যাপ্রুভ (অনুমোদন) হয়ে যায় তাহলে এটাকে নিশ্চয়ই সংসদে পাঠানো হবে। যেহেতু সোমবার সংসদ অধিবেশন শেষ হবে। সেই ক্ষেত্রে এটা (আরপিও) পাস করানো সম্ভব না। ’
তিনি বলেন, এ বিষয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা চাওয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ এর প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে হবে এবং প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করেই এটা পাস করাতে হবে।
২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয়। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষে হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সেই হিসেবে ৩০ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা, যা আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৮
এসএম/এমএ