সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির প্রথম দিন রোববার (২৮ অক্টোবর) অতিষ্ঠ হয়ে এভাবেই নিজের ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম।
সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের দাবিতে রোববার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার ‘কর্মবিরতি’ পালন করছে সংগঠনটি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অপেক্ষমাণ জাহিদুল বাংলানিউজকে বলেন, অফিসের কাজে সকালে মতিঝিল থেকে ভেঙে ভেঙে রিকশায় মোহাম্মদপুর এসেছি। এখন আবার মতিঝিল যাবো, বাস না থাকার সুযোগে সিএনজি বা রিকশা যাচ্ছেতাই ভাড়া আবদার করছে। উবার-পাঠাও চালকরাও অ্যাপসে নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছে। এখন আমরা সাধারণ জনগণ কোথায় যাবো?
আলাপ দীর্ঘ করতেই তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টরে বাংলাদেশের মতো নৈরাজ্য বোধহয় পৃথিবীর কোথাও নেই। যখন-তখন বাসচাপা দিয়ে মানুষ মারলেও ড্রাইভারদের কিছু বলা যাবে না। এতোদিন ঠিকমতো বিচারটাও পেতোনা ভুক্তভোগীরা। স্টুডেন্টরা আন্দোলনের পর একটা আইন হয়েছে, এখন এটাও তারা মানবেন না। জনগণের স্বার্থে আইন হলো কিন্তু তারা এটা মানবে না কেন? তারা কি দেশের জনগণ বা সরকারের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান? এতো ক্ষমতা এরা পায় কোথায়?
এদিকে, দুর্ভোগ পোহানো জনগণের মুখে শোনা গেছে পরিবহন ব্যবস্থা সংস্কারের কথা। তারা আইন সংস্কারকে যেমন সাধুবাদ জানিয়েছেন, তেমনি তারা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কথাও বলেছেন।
নূরুল কবির নামে এক বেসরকারি কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বাসচালকদের কতো ক্ষমতা হয়েছে যে তারা গুটিকয়েক মানুষ পুরো দেশবাসীকে জিম্মি করে দিলো। ভেবেছে গাড়ি বন্ধ করে দিলেই তাদের সবাই মাথায় তুলে নাচবে। সরকার যদি এমনটা করে তাহলে বড় ভুল হবে, যেখান থেকে ভবিষ্যতে আরো বেশি ভুলের সৃষ্টি হবে। সরকার যেমন নতুন আইন করেছে তেমনিভাবে কঠোরভাবে এই অপতৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
দিনভর পুরো রাজধানীতেই ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া রাস্তায় কোনো গাড়ি দেখা যায়নি। কিছু স্থানে ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাও শ্রমিকদের বাধার সম্মুখীন হয়েছে। ফলে পুরুষরা হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা হলেও সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন জানিয়েছে দাবি আদায় না হলে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণাও আসবে।
সকালে অফিসমুখী জনগণ দুর্ভোগ শেষে কোনোভাবে গন্তব্যে যেতে পারলেও বিকেল গড়াতেই ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ আবার শুরু হয়।
ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার বাসস্ট্যান্ডে রিকশা থেকে নেমে সেলিম আহমেদ বলেন, পল্টনে অফিস, ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকে ৩শ টাকায় সকালে রিকশায় করে অফিসে গেছি। এখন ফিরতে ৩৫০ টাকা রেখেছে। এই টাকা কি শ্রমিক ফেডারেশন দেবে? জনগণের এসব ভোগান্তি সরকারের কঠোরভাবে দমন করা উচিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ কেউ পিকআপে চেপে বসেছেন, কেউ মোটরসাইকেল, আবার কেউ রিকশায়। রোগীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। তবে বেশিরভাগ যাত্রীই হেঁটে রওয়ানা দিচ্ছেন গন্তব্যে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আট দফা দাবি উত্থাপন করেছি। সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের দাবি মানা হয়নি। যে কারণে আমরা পাস হওয়া আইনের কিছু ধারার সংশোধন ও উত্থাপন করা আট দফা দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। এই কর্মসূচি সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই কর্মসূচিতে বিক্ষোভ মিছিল হবে, তবে পিকেটিং করা হচ্ছে না। আমাদের কর্মবিরতির সুযোগ নিয়ে থার্ডপার্টি, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো পক্ষ যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে তবে তা রুখে দেওয়া হবে। সেজন্য আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে রয়েছি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটির নেতারা।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিক সমাবেশে অংশ নেন। সেখানে সংসদে পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর কয়েকটি ধারা সংশোধন এবং আট দফা দাবি পূরণের আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৮
পিএম/এএ