শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীদের। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে পরিবহন কর্মবিরতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছেন রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালকরা। তবে রাস্তায় দু’একটি লেগুনা চললেও তা ছিলো যাত্রীতে ঠাসা।
সোমবার (২৯ অক্টোবর) মগবাজার, সাতরাস্তা, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
ফায়েজ আহমেদ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার সকাল ১০টায় মিডটার্ম পরীক্ষা আছে। রাস্তায় পরিবহন নেই। অটোরিকশা ও রিকশা তিনগুণ বেশি ভাড়া দাবি করছে। রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালকরা অ্যাপ বন্ধ করে কন্ট্রাকে ভাড়া দাবি করছেন যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছি, যতদূর যাওয়া যায়।
ফায়েজের মতো একই বিড়ম্বনার শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রিকশা, অটোরিকশা চালকদের ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। ইচ্ছা মতো ভাড়া দাবি করছেন ভাড়া। কথা শেষ করে তিনি হেঁটে মতিঝিলের পথে রওনা হন।
তবে বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করলেন অ্যাপ চালক শাওন। তিনি বলেন, আজ নেটওর্য়াকে সমস্যার কারণে কন্ট্রাক্টে ভাড়া নিচ্ছি। বেশি ভাড়া চাইলেতো আর যাত্রী দেবে না। একই সুরে কথা বললেন, রিকশাচালক শফি।
এদিকে সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা বাতিল, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, চালকদের নামে বরাদ্দকৃত ৫ হাজার অটোরিকশা দ্রুত বাস্তবায়নসহ আট দফা দাবিতে রোববার সকাল ছয়টা থেকে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
তাদের দাবিগুলো হলো-
সড়ক দুর্ঘটায় সব মামলা জামিনযোগ্য হতে হবে, অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা বাতিল, দুর্ঘটনা তদন্তে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, ডাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণি করা, ওয়েস্কেলে জরিমানা ও শাস্তি বাতিল, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর থাকা এবং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
এর আগে শনিবার (২৭ অক্টোবর) ফেডারেশনটির সভাপতি সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক উছমান আলী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন -২০১৮’ পাস হয়েছে। এ আইনে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা ও পরিপন্থি উভয় ধারা রয়েছে।
এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে, অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন পাস করা হয়েছে। আইনে সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় অপরাধী হয়ে ফাঁসির ঝুঁকি রয়েছে। এমনই অনিশ্চিত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পেশায় দায়িত্ব পালন করা শ্রমিকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।
একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শনিবার বিকেল ৩টায় পরিবহন শ্রমিকরা জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
ইএআর/আরএ