রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় ‘কর্মবিরত’ পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা যেমন যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন, তেমনি চলছে না পণ্যবাহী কোনো পরিবহনও।
বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্টরা জানাচ্ছেন—
বরিশাল
পরিবহন শ্রমিকদের দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতিতে বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূর-পাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।
গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এসব রুটের যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিয়ে ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে কিছু জায়গায় অনেকটাই গোপনীয়ভাবে মাহিন্দ্রা-টেম্পু চলাচল করছে।
নগরের বাসিন্দা শাকিল আহম্মেদ বলেন, মহাসড়কে তো যানবাহন নেই। আর নগরেও গণপরিবহনের সংখ্যা অনেকটাই কম রয়েছে। এতে পাঁচ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১০ টাকা। আর সময় মতো যানবাহন না পেয়ে কর্মজীবীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
লক্ষ্মীপুর
সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও দ্বিতীয়দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন মতো চলছে পরিবহনশ্রমিকরা। সকাল থেকে লক্ষ্মীপুরে দুরপাল্লার বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা যায়নি। খোলা হয়নি কোনো বাস কাউন্টারও। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার হস্তক্ষেপে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে।
যুবলীগ নেতা তৎপর থাকায় শহরের কোথাও পরিবহনশ্রমিকদের অবস্থান করতে দেখা যায়নি।
দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা বলছেন, দাবি আদায়ের নামে বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা নৈরাজ্য করছে। তাদের কাছে সারাদেশ জিম্মি হয়ে পড়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা (দক্ষিণ) বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আল মাসুদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা জামিনযোগ্য করাসহ ৮টি দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।
জয়পুরহাট
আট দফা দাবিতে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জয়পুরহাটে দ্বিতীয় দিনেও চলছে পরিবহনশ্রমিকদের কর্মবিরতি। আর এ সুযোগে যাত্রী সাধারণদের কাছ থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন।
জুয়েল নামে এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, তার মোটরসাইকেল নষ্ট হওয়ায় পাঁচবিবি উপজেলা শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ১৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আজব দেশের বাসিন্দা আমরা। দাবি আদায়ের জন্য কথায় কথায় পরিবহন বন্ধ রাখা হয়।
বাগেরহাট
বাগেরহাটে দ্বিতীয় দিনের পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মাহেন্দ্র ও মোটরসাইকেলে যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
এদিকে কর্মবিরতির কারণে মোংলা বন্দর ইপিজেড ও শিল্প এলাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন আমদানি-রফতানি কারকরা। পাশাপাশি মোংলা বন্দরে পণ্যেরজট সৃষ্টি হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। মোংলা বন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় পণ্য বোঝাই জাহাজ অপেক্ষমান থাকলেও পরিবহন শ্রমিকদের কারণে মালামাল আনলোড করতে পারছে না। এছাড়া রফতানির জন্য কোন পণ্য সড়ক পথে বন্দরে আসতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।
দিনাজপুর
পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
বাংলাদেশের হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব শাহিনুর ইসলাম শাহিন বাংলানিউজকে জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক থাকলেও পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে আমদানিকরা পণ্য মোকামে পাঠাতে পারছেন না আমদানিকারকরা। এতে বিপাকে পড়েছে স্থলবন্দরের কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা।
সুনামগঞ্জ
পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন করেছে ‘যাত্রী সংহতি’ নামের একটি সংগঠন।
দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে এ মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা, দেশব্যাপী পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির নামে যাত্রীদের মারধর, হয়রানি ও শরীরে মবিল এবং আলকাতরা লাগানোসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
পঞ্চগড়
পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে যানবাহন শূন্য হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ে। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিন্ম আয়ের মানুষসহ কর্মজীবীরা।
সকাল থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক এবং দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস না চললেও ব্যাটরিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আশা করি আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে। তা না হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে আমরা প্রস্তুত।
তবে, কর্মবিরতির কিছুটা প্রভাব পড়তে দেখা গেছে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায়। কর্মবিরতির কারণে বন্দর এলাকায় ব্যবসায়ীদের মজুদ করা পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার কারণে আটকা পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে পারছে না বলে জানায় বন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা।
এদিকে মহাসড়কে বাস চলাচল না করায় যাত্রীরা ভিড় করছে রেলওয়ে স্টেশনে। ট্রেনপথে নেমেছে যেন ‘ঈদ’র ভিড়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
আরআইএস/