পাঠাও, উবার, সহজ, পিকমি’র মতো বিভিন্ন স্মার্টফোন ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানির চালকদের পাশাপাশি এ চক্রে যোগ দিয়েছেন অনিয়মিত মোটরবাইক, প্রাইভেট কার ও অটোরিকশা চালকরাও।
রাইড শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে অ্যাপস ব্যবহার না করে অসাধু রাইড শেয়ারকারী চালকরা কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করছেন মানুষের কাছ থেকে।
অ্যাপস ছাড়া রাইড শেয়ারিং-এ ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, নারীদের জন্য এটি আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
রাইড শেয়ারিংয়ে কোম্পানিগুলো বলছে, অ্যাপস ছাড়া রাইড শেয়ার চালক এবং রাইডার (যাত্রী) উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে এতে।
কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অ্যাপসে চালক ও আরোহীর বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষিত থাকে। চালক ও আরোহী কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছেন তারও রেকর্ড সংরক্ষিত থাকে। অ্যাপসে গেলে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটা সহজ নয়, ঘটলেও অপরাধীকে ধরা পড়তেই হবে।
শ্রমিকদের কর্মবিরতির এ সময়টা ছাড়াও অ্যাপস ছাড়া রাইড শেয়ারিংয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে এই দুই দিন এটি ব্যাপকহারে বেড়েছে।
উবার, পাঠাওসহ অন্যান্য রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরা দিনে একটা বা দুইটা রাইড অ্যাপস ব্যবহার করে করলেও অধিকাংশ রাইডই অ্যাপস ব্যবহার ছাড়া করছেন।
শাহাজাহান সরদার নামে একজন ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, এয়ারপোর্ট থেকে মিরপুর যাবো, রাইড শেয়ারকারী অনেকে মোটরবাইক সামনে আছেন। কিন্তু কেউ অ্যাপস এ রাজি হচ্ছেন না, চুক্তিতে গেলে তারা যাবেন।
তিনি বলেন, তাদের জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের অ্যাপস নাই। তারা বলে অ্যাপস আছে তবে এখন আর পাঠাও সার্ভিস নাই, এখন সব উঠাও সার্ভিস!
অ্যাপস ছাড়া চুক্তিতে যাত্রীকে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার এই ব্যবস্থাকে রাইড শেয়ারকারী চালকরা ‘উঠাও সার্ভিস’ বলছেন।
কালশী এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস মাহমুদ বলেন, কালশী থেকে মাটিকাটা পর্যন্ত ৪০/৪৫ টাকা ভাড়া আসার কথা সেখানে তারা অ্যাপস এ না এসে দেড়শ টাকা দাবি করছে।
রাস্তায় গণপরিবহন না থাকার সুযোগ নিয়ে মোটরবাইক চালকরা মানুষকে জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরাও সিএনজিওয়ালাদের মতো আচরণ করছে বলে মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে বিমানবন্দর যাব। রাইড শেয়ারকারী কোম্পানির প্রাইভেটকার চালকরা দেখি অ্যাপস ব্যবহার না করে চুক্তিতে যেতে চাইছেন। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে অন্য গাড়িতে গিয়েছি কিন্তু অ্যাপস ছাড়া যাইনি। এভাবে গেলে নিজের কোনো নিরাপত্তা নেই।
সাব্বির আহমেদ নামে রাইড শেয়ারকারী এক যাত্রী বলেন, অনেক সময় অনেক রাইডার অ্যাপস দেখিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করেন কিন্তু অফলাইনে রাইড শেয়ার করেন। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে কমিশন না দিয়ে পুরো টাকা নিজে নিতে তারা এটা করেন।
এ বিষয়ে আবুল কাশেম নামে রাইড শেয়ারকারী একজন চালক বলেন, অ্যাপস ব্যবহার ছাড়া রাইড শেয়ার করা যাত্রীদের মতো চালকদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ যাত্রী বেশে কেউ এসে ক্ষতি করে দিতে পারে।
তিনি বলেন, অ্যাপস ব্যবহার ছাড়া রাইড শেয়ার করাটা অন্যায়। তবে কোম্পানিগুলোরও উচিত কম হারে কমিশন নেওয়া।
এ বিষয়ে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে উবারের ইন্ডিয়া অফিসের মুখপাত্র বাংলানিউজকে জানান, অ্যাপস ছাড়া রাইড শেয়ার করা চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রযুক্তি আমাদের অবিশ্বাস্য সুযোগ এনে দিয়েছে। রাইড শেয়ারকারী চালক এবং রাইডার এক সঙ্গে মিলিত হওয়া থেকে শুরু করে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত তথ্য অ্যাপসের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে।
অ্যাপস ব্যবহার করে রাইড শেয়ার করে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে উবার কর্তৃপক্ষ ইনস্যুরেন্স সুবিধা দেয় বলেও জানান তিনি।
উবার মুখপাত্র আরো জানান, রাইড শেয়ারের আগেই চালক এবং রাইডার দুজনই দুজনের ছবি দেখতে পারেন, গাড়ির নম্বর জানতে পারেন, পরস্পরের সম্পর্কে জানতে পারেন। রাইড চলাকালে জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তারা নিজেরাই অবস্থান জানতে পারেন। রাইড শেয়ার করার পর অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ করতে পারেন। যার ওপর ভিত্তি করে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
এমইউএম/এমজেএফ