নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৮ অক্টোবর (রোববার) দিনগত মধ্যরাত থেকে জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকারে নেমেছেন। আর নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ১২ ঘণ্টা পার না হতেই বরিশালে একমাত্র বেসরকারি বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পোর্টরোড ইলিশে ভরে গেছে।
সোমবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মোকামেই প্রচুর ইলিশ রয়েছে, পাইকার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতাদের ভিড়ও প্রচুর। অবতরণ কেন্দ্র সংলগ্ন খালে ছোট ছোট ট্রলার- নৌকা এমনকি স্পিডবোটে করে স্থানীয় নদীর মাছ আসছে। প্রতিটি নৌযান থেকে বাঁশের সাজি, প্লাস্টিকের কাটা ড্রাম, বস্তাবোঝাই করে শ্রমিকরা নামাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। যার মধ্যে ছোট থেকে বড় সব আকারের ইলিশ রয়েছে। তবে অনেক ইলিশের পেটে এখনো ডিম রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এদিকে পাইকারের সঙ্গে খুচরা ক্রেতারাও মাছের দাম কিছুটা কম থাকায় এ অবতরণ কেন্দ্রে ভিড় করছেন।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের শ্রমিক আলতাফ হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর প্রথমদিনেই যে মাছের চাপ বেড়েছে তা সবার মুখে হাসি এনে দিয়েছে। ঝিমিয়ে থাকা পোর্টরোডে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা। এরকম চাপ আরো ২/১ দিন থাকবে বলেও জানান তিনি।
আড়তদার নাছির উদ্দিন খান জানান, এখন পর্যন্ত বরিশালের অবতরণ কেন্দ্রে আনুমানিক ২ হাজার মণের মতো মাছ এসেছে। আর এর সবই নদীর ইলিশ। আমদানি বেশি থাকায় দামও কিছুটা কমে এসেছে। ইলিশের চাপ এরকম আরো ২/১ দিন থাকবে, তবে ১ নভেম্বর থেকে ঝাটকা নিধন বন্ধের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ইলিশের চাপ কমে যাবে।
ভাই ভাই ফিসের মো. কুদ্দুস হাওলাদার জানান, মাছের দাম কম থাকলে আমদানি বেশি হওয়ায় বরফের দাম বেড়েছে। ২৫-৩০ টাকার একঝুঁড়ি ভাঙ্গা বরফ ৪০-৪৫ টাকা হয়েছে, অর্থাৎ এক ক্যান (পিস) আড়াইশ’ টাকার বরফ হয়েছে ৩শ’ টাকা।
তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে যদি আজ এ মাছ পাঠানো যদি না সম্ভব হয়, তবে কাল বরফের চাহিদা দ্বিগুণ হবে। এক্ষেত্রে বরফ সংকট দেখা দিলে খুলনা থেকেও বরফ আনতে হবে। সংকটে ক্যানপ্রতি বরফের দাম ৪শ’ টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে।
এদিকে জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি থাকলেও মাছ বিকল্প ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো সম্ভব হবে। তবে না পাঠাতে পারলে বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করবেন ব্যবসায়ীরা।
নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম দিনেই ইলিশের পরিমাণ সন্তোষজনক জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে সরকারের ইলিশ সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগর ও নদ নদীতে ইলিশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতিবছরই বড় বড় আকারের ইলিশ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সমন্বিত কর্মসূচির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে মণ প্রতি এলসি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ হাজার টাকায়, এলসির নিচের আকারের ইলিশ (ভ্যালকা) বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ হাজার টাকায় এবং এর নিচের আকারের গোটলা বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ হাজার টাকায়। এর চেয়ে ছোট আকারের মাছ ৬-৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ।
এদিকে এককেজি ওজনের ইলিশ মণ প্রতি বিক্রি হয়েছে ৩০-৩২ হাজার টাকা এবং দেড়কেজি ওজনের ইলিশ ৪৮-৫০ হাজার টাকা দরে মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
এমএস/জেডএস