সোমবার (২৯ অক্টোবর) রাতে দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনে সমাপনী বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। এটিই দশম সংসদের শেষ অধিবেশন।
এ সময় জীবনানন্দ দাশের কবিতার ভাষায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আবার আসিব ফিরে এই সংসদে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, যে উন্নয়নের ছোঁয়া বাংলাদেশ পেয়েছে, তাতে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চয়ই আবার নৌকায় ভোট দেবে। জনগণের কাছে আমার আবেদন আমরা যে মেগা প্রজেক্ট (প্রকল্প) গ্রহণ করেছি, তা সমাপ্ত করার জন্য আরো কিছু সময় প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি দেশের মানুষ নিশ্চয়ই সেই সুযোগ করে দেবে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত দেশ হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ২০৪১ সালে আমি হয়তো বেঁচে থাকব না। কিন্তু যে কাজ আমরা শুরু করেছি, যারাই ক্ষমতায় আসবে তারা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে। আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশ কেমন হবে সেজন্য আমরা ডেল্টা প্লানও তৈরি করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ যদি উন্নত সমৃদ্ধ জীবন-যাপন করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কি অপরাধ করেছে? তারা কেন পারবে না। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ উন্নত সমৃদ্ধ জীবন পাবে।
দশম সংসদের বিষয়ে সংসদ নেতা বলেন, নবম সংসদের সময় সংসদ সম্পর্কে যে বিরূপ ধারণা মানুষের মধ্যে জন্মাতে শুরু করেছিল এই সংসদ তা দূর করেছে। সংসদ যে মানব জাতির স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে কাজ করে সেই বিশ্বাস দেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতন্ত্র থাকলে যে উন্নতি হয় সেটা আজ প্রমাণ হয়েছে।
সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে প্রাণচাঞ্চল্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় সেজন্য ব্যাংক, বীমা, বেসরকারি টেলিভিশনসহ সবকিছু বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যত কী হবে, জীবনমান কেমন হবে? কেমন বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই, সেটাই একমাত্র চিন্তা। টানা ১০ বছরে আমাদের শাসনমালে তরুণ প্রজন্মের সুন্দর জীবন দিতে প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছি। আজকে আমরা নিজস্ব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ কোটি সিম ব্যবহার হচ্ছে। এতো সিম ব্যবহার পৃথিবীর কোন দেশে নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা তাদের মর্যাদা রক্ষা করেছি। ২০২১ সালের মধ্যে সুনির্দিষ্ট টার্গেট করেছি শুধুমাত্র আইসিটি খাত থেকেই ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবো। ইন্টারনেট ব্যবহারে বিশ্বব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে এখন দ্বিতীয়। ৬ লাখেরও বেশি দেশের তরুণ-তরুণী দেশে ঘরে বসেই আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জন করছে। মোবাইল ব্যাংকিংও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মোবাইল ব্যাংকে প্রতিদিন এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে, এটাই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কোরবানীর গরুও এখন অনলাইনে বিক্রি হয়। সাড়ে সাত হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব গড়ে তুলেছি। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আইটি খাতে বিরাজ সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য। ২০২১ সাল নাগাদ ১ হাজার ১৮৭টি ই-সেবা চালু করা হবে। সাইবার ঝুঁকি থেকে দেশকে রক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করেছি। যারা শুধু ক্রাইম করবে তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে, অন্যদের চিন্তা করার কোন কারণ নেই।
এসময় প্রধানমন্ত্রী আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। মা-বাবা ভাই সবাইকে হারিয়েছি। আমার বেঁচে থাকাটাই একটা দুর্ঘটনা। আমার ওপর বার বার আঘাত এসেছে। গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলা হয়েছে। আমি জানি যেকোন সময় আমি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারি। এটা জেনেই আমি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, ততক্ষণ দেশের জন্য, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাব।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
এসএম/এসকে/এনটি