বনানী সেতু ভবনে অনুমোদনের পর বুধবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নকশা চূড়ান্ত হয়ে আসে বলে প্রকৌশলী সূত্র নিশ্চিত করেন। বাকি ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশা শিগগিরিই আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, জাজিরা প্রান্তে রেলওয়ে বক্স স্লাব স্প্যানের ওপর বসানোর কাজ চলছে। মাটির গঠনগত বৈচিত্র ও গভীরতার তারতম্যের কারণে পদ্মাসেতুর মাঝনদী ও মাওয়া প্রান্তের এসব পিলার নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়ে এ প্রকল্প। নকশা চূড়ান্ত হওয়া পাঁচটি পিলারে স্ক্রিন গ্রাউটিং (Screen grouting) করে সমাধান মিলেছে। হাতেগোনা বিশ্বের কয়েকটি সেতুতে এটি ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মানদীর মাটির অবস্থা ভালো না। প্রথমে এখানে বেজ গ্রাউটিং করেও ভালো ফল আসেনি। তাই নতুন করে স্ক্রিন গ্রাউটিং করা হচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, এ পদ্ধতিতে ১২৬ মিটার পাইলের বডির ভেতরে চারপাশে সিমেন্ট ঢোকানো হবে। এজন্য ড্রেন করে রাখতে হবে। যাকে বলা হয় প্যাম্প সার্কিট। প্যাম্প সার্কিটের ১ মিটার পরপর ৮ এমএম ডায়ার ছিদ্র হবে। ট্যাম্পে ১ এমপিএ থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক শূন্য প্রেসার (চাপ) সেট করা হয়। এরপর প্রেসার দিয়ে সিমেন্ট গ্রাউট ঢোকানো হয়। যখন কাদামাটির সঙ্গে চলে যাবে তখন বন্ডিং হয়ে সারফেজ তৈরি করবে। পাইলের চারদিকে গ্রাউটের একটি শক্তিশালী লেয়ার তৈরি হয়। যা পাইলের লোড বেয়ারিংয়ের ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং কোথাও খুঁত থাকলে তা সেরে যায়। এ কাজে ড্রিলিং যদি সতর্কভাবে না করা হয় তবে ড্রিলিংয়ের ভার্টিক্যালি মুভে পাইলের কংক্রিটের মধ্যে ড্রিলিং হয়ে যেতে পারে। স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের জন্য Chemgrout মেশিনের প্রয়োজন যা বিদেশ থেকে আনা হবে। একটি পাইলে দু’টি Chemgrout মেশিন দরকার হয়। পিডিএ (পাইল ড্রাইভিং এনালাইসিস) টেস্টে যেসব পাইল উত্তীর্ণ হতে পারে না সেগুলোর জন্য রয়েছে স্ক্রিন গ্রাউটিং এর ব্যবস্থা।
মূল সেতুর এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে নকশা জটিলতায় মোট ১১টি পিলারের মধ্যে চারটি পিলারের নকশা চূড়ান্ত হয়। সম্প্রতি পাঁচটি পিলারের নকশা চূড়ান্ত হলো। এখন বাকি শুধু ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশা। ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ নম্বর পিলারে যেসব সমাধান এসেছিল তাই হয়েছে ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ নম্বর পিলারে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চূড়ান্ত নকশা এসেছে। বর্তমানে ২৫, ৩১, ৩২ নম্বর পিলারের কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পাঁচটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে এক কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর মাত্র দেড় মাস পর ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। আর পঞ্চম স্প্যানটি বসে এক মাস ১৬ দিনের মাথায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৮
এনটি