ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শুঁটকির জন্যে সমুদ্রে যাত্রা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৮
শুঁটকির জন্যে সমুদ্রে যাত্রা শুঁটকির তৈরি জন্য সমুদ্রে যাচ্ছেন জেলেরা। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং দস্যুদের আতঙ্ক থাকার পরও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের জন্য হাজার হাজার জেলে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেছেন। সোমবার (২৯ অক্টোবর) মোংলার পশুর নদী সংলগ্ন চিলা এলাকা থেকে নিজ নিজ মাছ ধরা নৌকায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করেন তারা।

অক্টোবর মাস থেকে সামুদ্রিক মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের মৌসুম শুরু হলেও ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে যেতে পারেননি জেলেরা। এবার ১ নভেম্বর থেকে আগামী ১৫ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত চলবে মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ।

 

সোমবার (২৯ অক্টোবর) ভোরে বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ,  শরণখোলা, খুলনার পাইকগাছা, শ্যামনগর, দাকোপ, রূপসাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার জেলে নৌকা, ট্রলার ও জাল নিয়ে মাছ ধরা এবং শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের উদ্দেশে দুবলার চরে রওনা দিয়েছেন।

মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশালসহ সুন্দরবন উপকূলের কয়েক হাজার জেলে মাছ আহরণ ও শুটকি তৈরির জন্য সাগর পাড়ে পাঁচ মাস অস্থায়ীভাবে বসবাস করবেন। এছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যজীবীরাও আসবেন সেখানে।

ইতোমধ্যে উপকূলের হাজারো জেলে ও মৎস্যজীবী দুবলার চর এলাকায় মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন।  

জেলেরা সুন্দরবনের উপকূলীয় দুবলা, আলোরকোল, মেহের আলীর চর, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, শেলার চর ও নারকেলবাড়িয়াসহ আটটি চরে ১লা নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত অবস্থান করবেন।  
 
শরণখোলার জেলে রফিকুল ইসলাম, মো. কামরুল ইসলাম, হালিম তালুকদারসহ একাধিক জেলে বলেন, আমরা বছরের ছয় মাস সমুদ্রে থেকে মাছ আহরণ করি। সেটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুঁটকি বানিয়ে বিক্রি করে জীবন যাপন করি। সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে কখনো কখনো দস্যুদের কবলে পড়ে হারাতে হয় সর্বস্ব। অনেক সময় জীবনও দিতে হয় দস্যুদের হাতে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগেও মারা পড়তে হয় অনেককে।  

মৎস্যজীবী সংগঠন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকার করে। এসময় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে দস্যুদের উৎপাতের আতঙ্ক। এসব কিছু মাথায় নিয়েই উপকূলীয় অঞ্চলের মৌসুমী জেলেরা জাল-নৌকা নিয়ে সাগর পাড়ে ছুটছেন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি দস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানান তিনি।
 
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরে এবছর শুঁটকি তৈরিকে কেন্দ্র করে দুই কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলেদের জন্য এবার দুবলার চরে ১ হাজার ২৫টি ঘর ও মহাজনদের জন্য ৪৮টি ডিপো ঘরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  প্রতিটি ঘর ২৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১২ ফুট প্রস্থের হবে। প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে সুন্দরবনের দুবলার চরসহ আটটি চরে এ শুটকি আহরণ।  

তিনি আরও বলেন, শুঁটকি আহরণের জন্য সেখানে অবস্থানরত জেলেরা সুন্দরবনের গাছ কেটে ঘর তৈরি বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না শর্তে তাদের পাশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এ মৌসুমে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সব ধরনের অপরাধ ঠেকাতে বনবিভাগের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।