ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অ্যাম্বুলেন্সই যেন ‘মুমূর্ষু’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৮
অ্যাম্বুলেন্সই যেন ‘মুমূর্ষু’ অকেজো হয়ে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স-ছবি-বাংলানিউজ

খুলনা: দীর্ঘ বছর রোগী বহন করতে করতে অবশেষে নিজেই অকেজো হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে খুলনা জেনারেল (সদর) হাসপাতালের দু’টি অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স দু’টি হাসপাতালের সামনে বছরের পর বছর পড়ে থেকে মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অ্যাম্বুলেন্স দু’টির গ্লাস, ইঞ্জিন, চাকাসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মানুষ খুলে নিয়ে গেছে।

অকেজো দু’টি অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও খুলনা সদর হাসপাতালে বর্তমানে কাগজে-কলমে দু’টি অ্যাম্বুলেন্স সচল রয়েছে। এর মধ্যে একটি সপ্তাহের ৫/৬ দিন যান্ত্রিক ত্রুটিতে অচল থাকে।

ফলে দরিদ্র রোগীদের পড়তে হয় বিপাকে। অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে রোগীদের প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে হয়। এতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রয়োজনীয় এ সেবা থেকে। এ অবস্থায় আক্ষেপে রোগীরা বলছেন, আমরা সেবা পাবো কিভাবে অ্যাম্বুলেন্স নিজেই মুমূর্ষু।

বুধবার (৩১ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আর একটি জরুরি বিভাগের সামনে রয়েছে। বছরের পর বছর খোলা জায়গায় পড়ে থাকায় অ্যাম্বুলেন্স দু’টির সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। অযত্নে পড়ে থাকায় গাড়ির কাঠামো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। যন্ত্রাংশের অধিকাংশই চুরি হয়ে গেছে। কাগজে-কলমে ভালো অ্যাম্বুলেন্স দু’টিও বয়সের ভারে নুজ্য। একটি চলে, অপরটি অচল। একাধিক রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, অযত্ন, অবহেলা ও মেরামতের অভাবে অ্যাম্বুলেন্স দু’টি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। সচল দু’টির একটি প্রায় নষ্ট থাকে। ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগী ও স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। দুর্ঘটনা কবলিত ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, ইজিবাইক, অটোরিকশা অথবা ব্যক্তিগত ভাড়া করা গাড়িতে।

আবু জাফর নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স পাওয়াটা সোনার হরিণের মতো। হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স । মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলছে তাদের রোগী পরিসেবা। আর এ রকম পরিস্থিতিতে রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।

তিনি জানান, রোগীর স্বজনরা দিগুণ দামে বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স বা প্রাইভেটকার ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন রোগী পরিবহনের জন্য।

মিজান নামের এক রোগী বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা আমাদের ভাগ্যে নেই। অ্যাম্বুলেন্স নিজেই মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে।

জেলার এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে দিনে শত শত রোগী ভর্তি ও ছাড়পত্র পান। এদের মধ্যে ১০ শতাংশ রোগীও অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা পান না। রোগীর সেবা দিতে হলেও তিন থেকে চারটি অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন বলে মনে করছেন হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ও নার্সরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার স্বাস্থ্য অধিদফতরকে আরও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার তাগিদ দিলেও অধিদফতর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।  

অকেজো হয়ে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স-ছবি-বাংলানিউজসিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ও ১৪ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান ডিও লেটার পাঠান।  

খুলনা সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক আসাদ বাংলানিউজকে বলেন, অকেজো দু’টি অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কাগজে কলমে দু’টি ভালো থাকলেও একটি অকেজো। অন্যটি দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া যায় না। কয়েক দফা খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, খুলনা সদর হাসপাতালে কমপক্ষে ২-৩টি সচল অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে আমরা বার বার আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পাইনি। আশা করি পাবো। দেখি এ বিষয়ে কালকে আবার কথা বলবো।

রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। নতুন অ্যাম্বুলেন্স না পওয়া পর্যন্ত রোগীদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। হাসপাতালে যে দু’টি অ্যাম্বুলেন্স পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তা প্রায় ১০-১৫ বছরের পুরনো। ওই দু’টি আর মেরামত সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৮
এমআরএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।