তিনি বলেছেন, আমরা সুন্দরবনে অভিযান পরিচালনা করেছি। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সুন্দরবনের দস্যুদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছি।
বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে ছয় দস্যু বাহিনীর ৫৪ সদস্যের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় আত্মসমর্পণকারী দস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরায় তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এসময় দস্যু ছাত্তার বাহিনীর প্রধান আব্দুস ছাত্তার, বনদস্যু নাসিম শেখের মেয়ে নাসরিন সুলতানাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী আত্মসমর্পণকৃত দস্যুদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়া যেসব মামলা রয়েছে তা প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। এছাড়া যাদের ঘর নেই তাদের ঘর এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এসময় সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
আত্মসমর্পণ অণুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহা-পরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার জন্য আমরা সুন্দরবনে র্যাবের চারটি ক্যাম্প করবো। যেখান থেকে সব সময় সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য কাজ করা হবে। এরপরও কেউ যদি সুন্দরবনে দস্যুতা করার দুঃসাহস দেখায় তাহলে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।
আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা।
অনুষ্ঠানে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার হাবিবুন্নাহার, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসাইন মিয়া, র্যাব-৬ এর অধিনায়ক হাসান ইমন আল রাজিব, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় প্রমুখ। এসময় পুলিশ, র্যাব ও প্রশাসনের কর্মকর্তা, আত্মসমর্পণকারী দস্যু ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ প্রায় পাঁচ হাজার লোক ছিল।
এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুন্দরবনের আনোয়ারুল বাহিনীর আট সদস্য, তৈয়াবুর বাহিনীর পাঁচ, শরিফ বাহিনীর ১৭, ছাত্তার বাহিনীর ১২, সিদ্দিক বাহিনীর সাত ও আল আমিন বাহিনীর পাঁচ সদস্য আত্মসমর্পণ করলেন। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ৫৮টি অস্ত্র ও তিন হাজার ৩৫১টি গোলাবারুদ জমা দেন।
এর আগে বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের ২৬টি বাহিনীর ২৭৪ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। তারা ৪০৪টি অস্ত্র ও ১৯ হাজার ১৫৩টি গোলাবারুদ জমা দেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় র্যাব অভিযান চালিয়ে সুন্দরবন থেকে ৫০৭ দস্যুকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে এক হাজার ৫৫৬টি অস্ত্র ও ৩৩ হাজার ৩২৪টি গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব। সুন্দরবনে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৩৫ জন দস্যু নিহত হয়েছেন।
আত্মসমর্পণ করা একেকজন দস্যুকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ এক লাখ করে এবং র্যাবের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে শীতবস্ত্র ও একটি মোবাইল ফোন সেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৮
এসআই