এই সংলাপ ঘিরে কী ভাবছেন সাধারণ ভোটাররা? বিশেষজ্ঞদেরইবা মতামত কী? এ নিয়ে বাংলানিউজ কথা বলে সাধারণ জনতা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তারা বলছেন, এই সংলাপের মাধ্যমেই যেন দেশে শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) গণভবনে বিএনপি-গণফোরামসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে ১৪ দলীয় জোটের। শুক্রবার (২ নভেম্বর) ক্ষমতাসীন জোট এই সংলাপ করেছে বিকল্প ধারাসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে। আরও বেশ কিছু জোট-দলের সঙ্গে সংলাপের সময় ঠিক করেছে ক্ষমতাসীনরা। যদিও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ‘সংলাপ ভালো হয়েছে’ বলা হলেও দাবি করা হয়েছে, ‘সমাধান মেলেনি’। তবে সাধারণ ভোটার ও বিশেষজ্ঞরা আশায় বুক বাঁধছেন। তারা বলছেন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও সব দল জাতীয় স্বার্থে ছাড় দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে।
রাজধানীর মিরপুরে কথা হচ্ছিলো রিকশাচালক সবুজ মিয়ার সঙ্গে। তার বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে। থাকছেন মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের দিয়া বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। তিনি ঢাকা-১৪ আসনের ভোটার। সবুজ মিয়ার কাছে ‘সংলাপ’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ‘সংলাপ হয়েছে ভালো। ভোটে যেন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে, আমরা যেন নিজের ভোট নিজে দিতে পারি, সেই প্রত্যাশা করি। ভোটের আগে মারামারি কাটাকাটি ভালো নয়। ’
উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সংলাপের পাশাপাশি প্রার্থী ও কর্মীদের সহিংসতার মানসিকতা পরিহারের আহ্বানও জানিয়েছেন অনেকে। নির্বাচনে জয়ের পাশাপাশি পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে বলেও মনে করেন তারা। বরিশালের বেতাগীর মোশাররফ হোসেন বলছিলেন সে কথা। তিনি থাকেন মিরপুরের পল্লবী এলাকায়। ঢাকা-১৫ আসনের ১৩ নং ওয়ার্ডের ভোটার মোশাররফ।
তিনি বলেন, ‘সংলাপ যাই হোক। একজন নমিনেশন পাবে। প্রার্থী যদি কর্মীরে বইলা দেয়- তোমরা এলাকায় মারামারি হানাহানি করবা না। তোমরা মহড়া করো, মিছিল করো, কিন্তু কাউরে মারবা না। তাহলেই শান্তি আসবে। নইলে দেখা গ্যাছে আওয়ামী লীগের একটা (কর্মী) আইছে, বিএনপিরও একটা আইছে, লাগলো মারামারি! এইডা তো আর সুষ্ঠু-শান্তি না। এইতো আমরা আরও অসুস্থ হইয়ে যাইতেছি। প্রার্থী-কর্মী ভালো হলেই শান্তি হবে। ’
মালিবাগের মধুবাগের দোকানি ফরাজ মালিথা মনে করেন ভোটে জয়-পরাজয় হবে, এটা সাধারণ ভোটাররা যেমন সহজে বুঝতে পারেন, এই বোধটা প্রার্থীরও থাকতে হবে। ফরাজ বলেন, ‘মার্কেটে (নির্বাচন) হারজিত আছেই। এটা মাইনা নিতে হবে। এ চায় আমি হমু, ও চায় আমি হমু। সবাই হইতে চাইলেতো হইতো না। ভোট মানেই খুশি খুশি লাগে। পাঁচ বছর পরে অনেকেটা ঈদের খুশি লাগে। সবাইকে খুশি ভাগ করতে নিতে হইবে। শুধু সংলাপ দিয়ে হইতো না। আমাদের সবাইকে ভালো হইতে হবে। ’সাধারণ ভোটারদের যেমন এই ভাবনা, তেমনি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক অনাস্থা ও বৈরিতা দূর করা জরুরি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা দেখেছি বিগত যে ১০টি নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে। কারণ এই সময়ে রাজনৈতিক সমঝোতা ছিলো। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তেমন কোনো বৈরিতা ছিলো না। সংলাপের মাধ্যমেও রাজনৈতিক সমঝোতা সম্ভব। ভোটের আগে সহিংসতা দূর করতে রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে সবাইকে। ’
সংলাপের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সংলাপ হতে পারে নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক। সংলাপের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আমাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার। আমাদের আশা, সংলাপ যেন শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ বয়ে আনে। ’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘সংলাপের আউটপুট ভালো হতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সদিচ্ছা নেই। আমরা সবাই ক্ষমতাই চাই। কারও পরাজয় মেনে নেওয়ার মন-মানসিকতা নাই। রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে একটি শান্তিপূর্ণ ভোট উপহার দিতে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/