ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কর্মক্ষম যুবসমাজই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
কর্মক্ষম যুবসমাজই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি

ঢাকা: সরকার দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কর্মক্ষম যুবসমাজই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। যে কারণে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহুমুখীকরণ করে যুবকদের প্রশিক্ষিত করে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময় দেশে একের পর এক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম ও ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং টেনিক্যাল ও ভোকেশনাল ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে সময়ের প্রয়োজনটা জেনে নিয়ে সেভাবে আমাদের হালনাগাদ হওয়ার দরকার।

আমি এক্ষেত্রে আহবান জানাবো, আমাদের ব্যক্তিখাতগুলোও যেন আরও বেশি করে এগিয়ে আসে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগটা সরকারের পাশাপাশি তারাও যেন নেয়। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যুব সমাজকে একটি দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। কারণ, আমাদের তরুণ মেধাবী যুবশক্তিকে একটু সুযোগ করে দিলে তারা নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারে। ’

শেখ হাসিনা জানান, তার দল আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকারে এলে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আধুনিক ট্যানারি ও স্বতন্ত্র চামড়া শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে। সরকার ইতোমধ্যে শিল্পাঞ্চলের উপযোগী স্থান নির্ধারণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শুভাশিষ বসু, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সফিউল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন।

চামড়া শিল্প ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বিভিন্ন ব্রান্ডের চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। এই কাজগুলো যেন আরও ভালভাবে করা যায় আপনারা তা খেয়াল রাখবেন। এজন্য যা কিছু সহযোগিতা দরকার, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে, আমরা তা করবো। এই সেক্টরটিকে আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সেই সম্ভাবনাটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সেদিকে দৃষ্টি দিয়েই আমাদের সবরকম ব্যবস্থা নিতে হবে। ’

তিনি রপ্তানি বাস্কেট বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘সবসময় আপনাদের মাথায় রাখতে হবে আরও কোন কোন দেশে আমরা রপ্তানি করতে পারি। কোন দেশের চাহিদা কী, কোথায় আমরা আমাদের রপ্তানিটা বাড়াতে পারি। তাহলে আমাদের উৎপাদনও যেমন বাড়বে, দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা এবং রপ্তানি উভয়ই বাড়বে। এজন্য আমাদের বাজেটও বাড়াতে হবে এবং প্রণোদনাও দিতে হবে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেরা ব্যবসা করে না, বরং ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এই বিষয়ে ইতোমধ্যেই সরকার সব দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের বাংলাদেশে ডেকে তাদের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’

‘একসময় কূটনীতিটা ছিল পলিটিক্যাল আর এখন হয়ে গেছে ইকোনমিক্যাল। কী ধরনের বিনিয়োগ আমাদের দেশে আসতে পারে সেটাকেই খুঁজে নিয়ে আসা এবং সেভাবেই কাজ করতে হবে। ’

সরকার রপ্তানির সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত যে চারটি খাতের উন্নয়নে ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার মধ্যে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প অন্যতম।

রাজধানীর হাজারীবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ট্যানারি শিল্পসমূহকে একটি পরিবেশবান্ধব জায়গায় স্থানান্তরের জন্য ঢাকার সাভারে ধলেশ্বরীর নদীর তীরে ২০০ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে ১১৫টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। তবে, এটাকে আরও আধুনিকায়ন করা দরকার।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের জনগণ অনেক মেধাবী, একটু প্রশিক্ষণ দিলেই তারা সুন্দর কাজ করতে পারে, বিশেষ করে নারীরা চমৎকার হাতের কাজ করতে পারে। কাজেই এভাবে ব্র্যান্ডগুলোকে আমরা আরও সুন্দর রূপ দিতে পারি।  

‘দেশে আরও বেশি বেশি পাদুকা শিল্প গড়ে উঠুক, দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড এখানে আসুক, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসুক। এর ফলে একদিকে আমাদের যেমন কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে যারা কাজ করাবেন তারা অত্যন্ত সস্তা শ্রমে এবং সুন্দর পরিবেশে কাজটা করিয়ে নিতে পারবেন। ’

দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা যেন বেশি করে এদেশে আসেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, প্লেনগুলোতে রিফুয়েলিং করেন এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত পরিদর্শন করেন, সেজন্য সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরটিকে সম্প্রসারিত এবং আন্তর্জাতিক মানের করছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত করেছি। দেশে অভ্যন্তরীণ বাজার যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমরা ইতোমধ্যে কানেকটিভিটি সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছি। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিশাল বাজারেও আমাদের প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে জিএসপি সুবিধা এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের ডিউটি ফ্রি প্রবেশাধিকার সুবিধা থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, এভাবে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে আমাদের প্রচেষ্টার শুভফল দেশের মানুষ যেমন পাচ্ছে, তেমনি আপনারা ব্যবসায়ীরাও পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।