শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) বরগুনা নদী বন্দরে জোছনা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ।
বরগুনার খড়স্রোতা পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদী।
একদিকে সীমাহীন সাগর। আরেকদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। একদিকে দীর্ঘ ঝাউবন, আরেকদিকে তিন তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা। সবমিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার- ‘শুভ সন্ধ্যার’ চর! ভরা পূর্ণিমায় এখানেই জলজোছনায় একাকার হয় জোছনাবিলাসী হাজারো মানুষ।
জেলা প্রশাসক এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে তার সঙ্গে ছিলেন বরগুনা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারা।
উদ্বোধনী বক্তব্য শেষে বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে দু’টি দোতলা লঞ্চে করে উৎসবস্থল তালতলীর ‘শুভসন্ধ্যার’ উদ্দেশে রওনা করে কয়েক হাজার মানুষ।
বরগুনার খাগদন নদী হয়ে বাইনচটকীর স্নিগ্ধ বনভূমির পাশ দিয়ে কুমীরমারা আর গোড়াপদ্মার নয়নাভিরাম বন-বনানীর কোল ঘেঁষে বিকেল ৫টার দিকে লঞ্চ পৌঁছায় ‘শুভসন্ধ্যার’ চরে। তার আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়কপথে এসে হাজারো পর্যটক ভিড় জমায় উৎসবস্থলে।
বিকেল ৪টায় বিস্তীর্ণ বালুচরে দলীয় নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জোছনা উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর রাতভর জোছনার গান, রাখাইন নৃত্য, বাউল সঙ্গীত, মোহনীয় বাঁশি, পুঁথি পাঠ এবং কবিতা আবৃত্তির সঙ্গে জলজোছনায় একাকার হবে নারী ও শিশুসহ হাজারো মানুষ। শেষ রাতে জোছনা উৎসবের দ্বীপালী ভাসিয়ে শেষ হবে জোছনা উৎসব।
জোছনা উৎসবের উদ্যোক্তা সোহেল হাফিজ বলেন, শহুরে সভ্যতায় আমরা পেয়েছি অনেক, একই সঙ্গে হারানোর তালিকাও কম নয়। নাগরিক ব্যস্ততায় আমরা হারিয়েছি শ্রাবণের জলে সর্বাঙ্গ ভেজানোর সুযোগ। হারিয়েছি শরতের শিশিরে নগ্ন পায়ে হাঁটার সময়। হারিয়েছি রূপালী নদীতে হৈমন্তী পূর্ণিমায় জলজোছনায় অবগাহনের রোমাঞ্চকর অনুভূতি। সেইসব হারানো সময়, সুযোগ আর স্মৃতির কথা ভেবেই বরগুনায় শুভ সূচনা হয়েছিলো জোছনা উৎসবের।
বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুনীর জামান বাংলানিউজকে জানান, তরুণ লেখক ও সাংবাদিক সোহেল হাফিজের উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে বরগুনায় শুরু হয় জোছনা উৎসব। বিষখালীর মোহনায় প্রথমবারের সে জোছনা উৎসবকে ভালবেসে ফেলে স্থানীয় উৎসবপ্রিয় মানুষ। সেই থেকে প্রতিবছর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বরগুনায় উদযাপিত হয়ে আসছে জোছনা উৎসব। দলমত ও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারা এ উৎসবে অংশ নেয়।
তিনি আরও বলেন, এবারে প্রথমবারের মত বরগুনার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বরগুনার জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনায় এবারের উৎসবে বেশ কিছু নতুন ইভেন্ট সংযোজন করা হয়। পাশাপাশি বরগুনার এ উৎসবকে সারাদেশের উৎসবপ্রিয় মানুষের কাছে তুলে ধরতে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক ও জোছনা উৎসব আয়োজক কমিটি ২০১৮-এর আহ্বায়ক কবীর মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বরগুনা হলো এমন একটি জেলা যেখান থেকে নৌপথে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের দূরত্ব মাত্র ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। এছাড়া বরগুনায় রয়েছে নয়নাভিরাম স্নিগ্ধ বনভূমী আশারচর, লালদিয়ারচর, হরিণঘাটার বন, টেংড়াগিরির বনভূমি এবং ‘শুভসন্ধ্যার’ বিচ পয়েন্টসহ অনেক আকর্ষণীয় বন-বনানী ও নদ-নদীর মোহনা। এসব বনাঞ্চলে রয়েছে হরিণ, বানর, শূকরসহ শতেক প্রজাতীর প্রাণীবৈচিত্র্য। বরগুনার এসব আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা গেলে পর্যটন শিল্প বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এখানকার অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
তিনি আরও বলেন, বরগুনার মানুষ উৎসবপ্রিয়। জোছনা উৎসবের মত একটি উৎসবকে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে প্রচার করা গেলে প্রতিবছর এ উৎসবকে ঘিরে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। আর এভাবেই এগিয়ে যাবে বরগুনা। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২১০৮
আরএ