রোববার (২৫ নভেম্বর) সকাল ৮টায় ৪১ মিনিটে স্টেশনে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় চিত্রা এক্সপ্রেস। এর মাধ্যমে খুলনার পাওয়ার হাউস মোড়ের আন্তর্জাতিক মানের এ স্টেশনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
কলকাতার দমদম-যশোর-খুলনা রেললাইনে ১৮৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি খুলনায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেই পুরনো রেলস্টেশনে এতোদিন ট্রেন আসা-যাওয়া করেছে।
খুলনা আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত স্টেশন থেকে ট্রেনের যাত্রা শুরু হওয়ায় খুশি এ অঞ্চলের মানুষ। নতুন স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন যাত্রার সাক্ষী হতে পেরে ট্রেনের যাত্রীরা ভীষণ উচ্ছ্বসিত।
নতুন স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন যাত্রার সময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মো. মজিবর রহমান।
এর আগে চলতি বছরের ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনা সফরের সময় স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয়েছিলো। আধুনিক রেলস্টেশন বাস্তবায়ন হওয়ায় খুশি খুলনাবাসী। তারা বলছেন, নবনির্মিত রেলস্টেশন হওয়ায় যাত্রী সেবার মান বেড়ে যাবে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত খুলনার পুরনো রেলস্টেশনে ট্রেনে যাত্রী ওঠা-নামাসহ নানা ধরনের ভোগান্তি ছিলো। আধুনিক এ রেলস্টেশনটি চালু হলে সে ভোগান্তি আর থাকবে না। যাত্রীদের ও পণ্য পরিবহনে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন রেলস্টেশনটি করা হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট। প্রথম তলায় স্টেশন ভবনে থাকছে ৬টি টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম ও সহকারী স্টেশন মাস্টারের রুম। দ্বিতীয় তলায় থাকছে স্টেশন মাস্টারের রুম, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংকের শাখা, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়েটিং রুম, ফাস্টফুড এবং রেল কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা কক্ষ। তৃতীয় তলায় থাকছে রেলওয়ের প্রকৌশলীদের অফিস কক্ষ। এ স্টেশন চালু হলে একসঙ্গে ৬টি ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ এবং বের হতে পারবে। থাকছে সিটিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যমেরা ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। স্টেশন চত্বরে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান এবং অধিক সংখ্যক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও।
আধুনিক রেলস্টেশন চালু হলে খুলনার সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ আরো সহজ হবে। সেসঙ্গে ভারত যাত্রীদের খুলনা স্টেশনেই ইমিগ্রেশন ও চেকিংসহ সব ভ্রমণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং ভাড়া কমানোর বিষয়েও দু’ দেশের মধ্যে আলোচনা করে নিরাপদ ও সহজ যাত্রার দ্বার উন্মোচন করা হবে। এ স্টেশনে একসঙ্গে ৬টি ট্রেন প্রবেশ এবং বের হওয়ার ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের এপ্রিলে শুরু হয়। ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ মাস মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিলো। কিন্তু ঠিদাকারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন নির্ধারিত সময় কাজ শেষ করতে না পারায় দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ ব্যয় ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া এবং প্রকল্পে নতুন পানির ওভারহেড ট্যাঙ্কি যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে যায়। এরইমধ্যে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনে ত্রুটির কারণে নির্মাণাধীন ২ নম্বর প্লাটফর্মের ছাদে ফাঁটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বুয়েটের প্রকৌশলীদের পরামর্শে প্লাটফর্মের ছাদের দু’দিকে নতুন করে ভীম নির্মাণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সফরের সময় চলতি বছরের ৩ মার্চ স্টেশনটি উদ্বোধন করেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
এমআরএম/আরবি/