বিভিন্ন ভুক্তভোগীর বক্তব্য ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বুধবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দ্রপুরী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে চক্রের মূল হোতা কথিত ‘জিনের বাদশাহ’ জুবায়ের আহমেদ সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির ‘সিরিয়াস ক্রাইম’ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) সৈয়দা জান্নাত আরা।
তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময়ে জিনের বাদশা, দয়াল বাবা সেজে বিভিন্ন সমস্যারা সামাধান দেবে বলে বিজ্ঞাপন তৈরি করে। চক্রটি লটারি ও গুপ্তধন প্রাপ্তি, জটিল রোগ থেকে মুক্তি, পাওনা টাকা আদায়, দাম্পত্য কলহ, ভালোবাসার মানুষকে বশে আনাসহ যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে প্রলোভন দেখায়। হুজুরের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে নিয়ে যায়।
সৈয়দা জান্নাত আরা আরও বলেন, সোহেল মোল্লা নামে এক ব্যক্তি এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা হারিয়েছেন। তাকে লটারি পাইয়ে দেবে বলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার, ব্যাংক ও বিভিন্ন মাধ্যমে টাকাগুলো হাতিয়ে নেয় চক্রটি। গত ২২ জুলাই ভোলার বোরহান উদ্দিন থানায় এ অভিযোগে একটি মামলা করেন সোহেল মোল্লা। এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
গ্রেফতারের পর কথিত জিনের বাদশাহ জুবায়ের আহমেদ সুমন জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জানান, মাসিক ২০ হাজার টাকা দিয়ে তৈয়েবুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন, বর্তমান দিনকাল ও চিত্রবাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন তারা। ওই বিজ্ঞাপনে তারা বিভিন্ন দরবার শরিফের নাম ব্যবহার করে যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিতে পারেন বলেও প্রচার করতেন। এসব বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ মানুষ তাদের ফোন করলে ‘জিনের বাদশাহ’ ওই ব্যক্তিদের সমস্যার সামাধান করতে পারবেন বলে টাকা আত্মসাৎ করতেন।
সিআইডি আরো জানায়, প্রতারক জুবায়ের আহমেদ সুমনের নামে গত ২০১১ সালে ৫ ডিসেম্বর বোরহান উদ্দিন থানায় আরো একটি মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় তার পাঁচ বছরের সাজা হয়। তিনি ওই মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিলেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বোরহান উদ্দিন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
সম্প্রতি জুবায়ের আহমেদ সুমনের তিন সহযোগী জাফর ইকবাল ওরফে কাজল, সাগর এবং ছামিরকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এর মধ্যে জাফর ইকবাল ও সাগর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে সুমনের নাম উঠে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শাহ আলম বলেন, প্রতিদিন অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন দেখে সহজেই প্রতারণার শিকার হয় সাধারণ মানুষ। আমরা দেখেছি ঢাকার এক শিক্ষিত গৃহবধূ প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা হারিয়েছেন। আমরা এই কথিত জিনদের দুইভাগে ভাগ করেছি। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘টিভি জিন’ আর একটি হচ্ছে ‘মোবাইল জিন’।
টিভি জিনের কাছে গিয়ে মানুষ নিজেরাই প্রতারিত হন। আর মোবাইল জিন ফোন করে ভিকটিমদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছে আনে বলেও মন্তব্য করেন ডিআইজি মো. শাহ আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৮
পিএম/এমজেএফ