বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা বা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নামে ভুয়া প্লেট-টোকেন ব্যবহার করে চলাচল করা এসব রিকশার নেই কোনো অনুমোদন। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পুর্নবাসন সংস্থা, প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন, জাতীয় শ্রমিক লীগ কর্মচারী ইউনিয়ন, শ্রমিক ফাউন্ডেশন ইত্যাদি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এসব রিকশার অধিকাংশই রাজধানীর খিলগাঁও, কমলাপুর, পুরান ঢাকা, লালবাগ, হাজারীবাগ এলাকায় চলাচল করছে। তবে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এগুলো চলাচল করে কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বাড্ডা, পল্টন, ফকিরাপুল, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন সড়কে।
অন্যদিকে রিকশা-ভ্যান মালিক সমিতির এক তথ্য মতে, রাজধানী ঢাকাতে রিকশা চলাচল করছে ৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ৭৯ হাজার ৪০০টির মতো। যার পাঁচ হাজার চলছে বিভিন্ন সোসাইটির নামে। আর বাকিগুলো চলাচল করছে লাইসেন্সবিহীন।
খিলগাঁও এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন বেশ জনপ্রিয়। দ্রুত বহনে সক্ষম হওয়ায় যাত্রীদেরও বেশ পছন্দ এসব রিকশা। আর এদের ভিড়ে কমেছে লাইসেন্সধারী অন্য রিকশাগুলোর ভাড়া।
তবে সড়ক বা বিভিন্ন গলিতে চলাচল করলেও পুলিশ এসব চালকদের কিছু বলে না বলে অভিযোগ করছে রিকশা মালিক ফেডারেশন। তাদের মতে, টাকার বিনিময়ে অবৈধ রিকশা বৈধ করে চলার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের যুক্তির সঙ্গে একমত নয় প্রশাসন। এসব অবৈধ রিকশা পেলেই ডাম্পিং করা হয় বলে জানান দায়িত্বরত ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
অবৈধ হওয়ার পরও কেনো এ রিকশা চালান এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক মো. আয়ুব বাংলানিউজকে বলেন, এগুলো চালালে ভাড়া বেশি পাওয়া যায়, দ্রুত যাত্রী পরিবহন করা যায়। গাড়ি মালিককে দিনে ৪০০ টাকা, ব্যাটারির চার্জ বাবদ ২০ টাকা আরও অতিরিক্ত দেওয়া লাগে। দিনে হাজার-বারশ’ ভাড়া আসে। খরচ বাদ দিয়ে ভালো আয় থাকে। কোনো সমস্যা হয় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনে বড় রাস্তায় যাওয়া হয় না। আর ট্রাফিক ধরলে টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করা হয়।
রিকশা-ভ্যান মালিক ফেডারেশনের সভাপতি ইনসুর আলী বাংলানিউজকে বলেন, নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ঢাকাতে ৪০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। আমরা পুলিশ বিভাগকে বারবার বলেছি এগুলো আটকের জন্য। তারা আশ্বাস দেয়, কিন্তু কোনো কাজ হয় না। এগুলো মুক্তিযোদ্ধার নামে ভুয়া প্লেট-টোকেন ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত চলছে। প্রশাসনের গাফিলতি আর তাদের ইঙ্গিতেই এটা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ট্রাফিকের ঢাকা দক্ষিণ বিভাগে কর্মরত সার্জেন্ট রেদওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কোনো অবৈধ রিকশা পেলেই তা জব্দ করে ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে দেই। টাকার বিনিময়ে কাউকে ছাড়া হয় না। তবে এর চলাচল এখন অনেক কমে গেছে।
রাত ১১টার পর সড়কে চলাচল করছে কি-না সে বিষয়ে বলতে পারবো না বলে প্রসঙ্গ এড়ালেন তিনি। একই কথা জানান সবুজবাগ জোনের দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সরওয়ার। তিনি বলেন, আমরা অবৈধ যে কোনো গাড়ির বিষয়ে আগে সতর্ক করেছি। কোনো গাড়ি পেলে আমরা তা জব্দ করি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৮
ইএআর/জেডএস