ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জীবনের শেষদিনে কথাই বলতে পারেননি তারামন বিবি 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৮
জীবনের শেষদিনে কথাই বলতে পারেননি তারামন বিবি 

ময়মনসিংহ: ‘মায়ের শেষ ইচ্ছা অনেকবার জানতে চেয়েছি। কিন্তু মৃত্যুর আগে জীবনের শেষদিনে মা কোনো কথাই বলতে পারেননি। মা সব সময় আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। আমাদের কে দেখবে, আমাদের সন্তানদের কী হবে?’

বলতে বলতেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি তারামন বিবি বীর প্রতীকের সন্তান আবু তাহের। শনিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় জাতির এই বীরকন্যার রেখে যাওয়া এই আমানতের সঙ্গে।

 

কান্নাভেজা কণ্ঠে আবু তাহের বলেন, মাত্র আটদিন আগে (২২ নভেম্বর) ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কাচারিপাড়া গ্রামে মাকে নিয়ে আসি। শ্বাসকষ্টে তখনও মা টিকতে পারছিলেন না। ভেবেছিলাম বাড়িতে এলে মা সুস্থ হয়ে উঠবেন। তখন কে জানতো বিজয়ের প্রথম প্রহরেই চলে যাবেন আমার মা।

তাহের বলতে থাকেন, মৃত্যুর রাতে সকাল থেকেই মা কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। তার খাওয়ার রুচি ছিলো না। বাড়িতে আনার পর শেষের দিনগুলোতে আর চিকিৎসকের কাছেও যেতে চাইতেন না। কাশি’র যন্ত্রণায় বন্ধ ছিলো তার জবান। ফলে জীবনের শেষদিনে কোনো কথাই বলতে পারেননি।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করেন তারামন। ওই সময় ১১ নম্বর সেক্টরের হয়ে ক্যাম্পটিতে মূলত রান্নার কাজই করতেন।  

পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখার কাজও করতেন। পরে রান্নার ফাঁকে তিনি অস্ত্র চালানো শেখেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে সরকার তাকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করে।  

দীর্ঘদিন যাবৎ শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন তারামন বিবি। গত ৮ নভেম্বর দুপুরে তাকে কুড়িগ্রামের রাজিবপুরের বাসা থেকে ময়মনসিংহের সিএমএইচে এনে ভর্তি করা হয়।  

পরে ওইদিনই বিকেলে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে টানা ১৪ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরে গত ২২ নভেম্বর তাকে রাজিবপুরের নিজ বাড়িতে নিয়ে যান ছেলে আবু তাহের।  

মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা এই মুক্তিযোদ্ধা নিজের চেয়েও বেশি উৎকণ্ঠায় ছিলেন তার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে। সেই কথাই বলছিলেন ছেলে আবু তাহের।  

সরকার আমার মায়ের জন্য যথেষ্ট করেছে। সার্বক্ষণিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু মা চিন্তা করতেন আমাদের কী হবে। তিনি চলে গেলে আমাদের কে খোঁজ খবর রাখবে। আমাদের দুই ভাইবোনের ঘরে চারটি সন্তান। সরকার যেন আমাদের সন্তানদের প্রতি সুনজর দেয়-একই রকম কথা জানান তারামন বিবির মেয়ে সাজেদা খাতুনও।

এর আগে শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তারামন বিবি।

পরে শনিবার বিকেল ৩টার দিকে রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে জানাজা শেষে নিজ বাড়ির আঙিনায় চিরনিদ্রায় তাকে শায়িত করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২২১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।