ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হেমন্তেই এবার শীতের আঁচড় উত্তরে

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৮
হেমন্তেই এবার শীতের আঁচড় উত্তরে হেমন্তের কুয়াশা মোড়ানো সকালে বৈদ্যুতিক তারে বসে দু’টি পাখি। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: ষড়ঋতুর বাংলাদেশে এখন হেমন্ত প্রবাহমান। শীত জেঁকে বসতে এখনও কিছুটা সময় বাকি। কিন্তু ঋতুকন্যা হেমন্তেই এবার আঁচড় দিয়েছে শীত। কুয়াশাঢাকা ভোরে দুর্বাঘাসের ওপরে শিশির বিন্দুর খুনসুঁটি চোখে পড়ছে বেশ ক’দিন ধরেই। 

এরই মধ্যে উত্তরকোণ থেকে বইতে শুরু করেছে হিমেল হাওয়া। হিম হিম ঠাণ্ডা জড়িয়ে ধরছে শরীরের চারপাশ।

আর্দ্রতা কমতে শুরু করেছে বাতাসে। তাই টান ধরছে শুষ্ক ত্বকে। যতই দিন যাচ্ছে রোদের তেজ ততই কমছে। যেন হামাগুড়ি দিয়ে শীত আসছে উত্তরে। কমে এসেছে রৌদ্রদীপ্ত দিনের পরিধি। বিকেল চারটা বাজতেই পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ছে সূর্য। গোধূলী লগ্ন পেরিয়ে জলদিই নেমে আসছে সন্ধ্যা। ভোরের আলো ফুটতেই স্নিগ্ধ শিশিরে ভেজা সবুজ ধানের পাতাগুলো হিমেল হাওয়ায় নুয়ে পড়ছে।  

মধ্য অগ্রহায়ণে পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে এখন শীতের আবহ অনেকটা এমনই। সন্ধ্যার পর হিমেল হাওয়া আর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।

শীতের আবহ শুরু হওয়ায় এরইমধ্যে মানুষের শরীরে মোটা কাপড় উঠেছে। কংক্রিটের নগরে বন্দি থাকা মানুষগুলো শেষ রাতে নকশীকাঁথা মুড়ি দিচ্ছে। ধুনকরপট্টিতে চলছে লেপ-তোষক তৈরির তোড়জোড়। গ্রামের মেঠোপথ পেরিয়ে গাছিরা কোমরে রশি বেঁধে উঠে পড়ছেন খেজুর গাছে। মাটির হাড়িতে করে মিষ্টি মধুর খেজুরের রস নামাচ্ছেন। ঘরে-ঘরে শুরু হয়ে গেছে নবান্নের প্রস্তুতি, আর পিঠাপুলির আয়োজন।

তবে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এমন হালকা শীতের আমেজ স্থায়ী হবে না। উত্তরের জেলাগুলোতে মধ্য ডিসেম্বরের পরই জেঁকে বসতে পারে শীত। শীতকালের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়া। এতে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে ওঠে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাতাসে জলীয় বাষ্প কমছে। আর উত্তর থেকে হিমেল হাওয়াও বইতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দিনের সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। তাপমাত্রা এখন কমতেই থাকবে। কুয়াশায় ধানের শীষে জমেছে পানি।  ছবি: বাংলানিউজজানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তেমন একটা তাপমাত্রা কমার আশঙ্কা নেই। তবে এ সময় শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় ঘন বা মাঝারি কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র মাঝারি বা হালকা ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। প্রথমার্ধে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। কিন্তু মধ্য ডিসেম্বরের পর রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমতে পারে।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন।  

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ৩০ নভেম্বর থেকে রাজশাহীতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। ওই দিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

২ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৩ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ এবং সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ৭৮ শতাংশ। ফলে পরিসংখ্যান বলছে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে।  

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, সূর্য যতো দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে যাবে শীতের তীব্রতা ততটাই বাড়তে থাকবে। তাছাড়া দিনের ব্যাপ্তি কমে আসায় ডিসেম্বর থেকেই বাংলাদেশে শীত পড়তে শুরু হয়। তখন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বাতাস বাংলাদেশের দিকে আসায় তাপমাত্রা আরও কমে আসে। এর সঙ্গে সাইবেরিয়া থেকে আসা হিমেল বাতাস যোগ হয়। ফলে হাড় কাঁপানো শীত পড়তে শুরু করে। তাই ডিসেম্বরের শেষে শীতের এই তীব্রতা বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৮
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।