বুধবার (০৫ ডিসেম্বর) আগারগাঁও বিবিএস-মিলনায়তনে জনশুমারি (আদমশুমারি) এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ‘পপুলেশন অ্যান্ড হাউজিং সেনসাস ২০২১: প্রসপেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানক বলেন, জনশুমারিতে সব মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে নজিবুর রহমান বলেন, প্রবাসী ভাইয়ের আমাদের দেশের উন্নয়নে নানা দেশে অবস্থান করছেন। তারা (প্রবাসী) যেন বাদ না পড়ে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সহায়তা নিতে হবে।
২০১১ সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়। যা পঞ্চম আদমশুমারি বলে পরিচিত। ২০১১ সালের ৫ দিনব্যাপী (১৫ থেকে ১৯ মার্চ) এ গণনা অনুষ্ঠিত হয়। বিবিএস প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি পরিচালনা করে থাকে। এ পদ্ধতিতে দেশের একটি খানাও (পরিবার) বাদ পড়বে না। স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে আদমশুমারিতে সারাদেশে চার লাখ গণনাকারী তথ্য সংগ্রহ করবেন। একটি মানুষও গণনার বাইরে থাকবে না। সব মানুষের অবস্থান নিশ্চিত করা সহজ হবে স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে। বিনিময়ে ৫০ কোটি টাকা দিতে হবে নাসা’কে। সবমিলিয়ে ৬ষ্ঠ আদশুমারির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা।
আদমশুমারি মানেই সারাদেশ ব্যাপী বিশাল কর্মযজ্ঞ। কিন্তু ডিজিটাল এ শুমারিতে কোনো খাতা-কলমের ব্যবহার থাকবে না। সব কিছুই অনলাইনে ডাটা সংগ্রহ করা হবে। শুমারির প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ২০১১ সালের আদশুমারি ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলেও ৬ষ্ঠ আদমশুমারি ৭ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হবে। এ সাতদিনে চার কোটি খানায় (পরিবার) তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ভাসমান লোকজনকে গণনা করা হবে মধ্যরাতের পরেই। বহুতল ভবনের একজন বাসিন্দাও যাতে গণনা থেকে বাদ না পড়ে সেই কথাও চিন্তা করছে বিবিএস। সঠিক শুমারি দেশবাসীকে উপহার দিতে বিবিএস সব পর্যায় থেকে মতামত গ্রহণ শুরু করেছে।
আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চার লাখ ডিজিটাল ডাটা কালেক্টর আদমশুমারিতে অংশ নেবেন। তাদের কিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেই বিষয়েও ছক কষছেন বিবিএস। ইমেইল, অনলাইন, ট্যাব, আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অডিও ভিজুয়্যালের বিষয়ে ডাটা কালেক্টরদের প্রশিক্ষণ দেবে বিবিএস।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল হক সরদার বলেন, এবারের জনশুমারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক উন্নয়নের রোডম্যাপ নেওয়া হবে শুমারিকে কেন্দ্র করে। আমরা এবার ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করবো শুমারিতে। প্রবাসী ভাইয়েরাও শুমারিতে আসবেন। তবে যারা দীর্ঘদিন বিদেশে বসবাস করছেন, দেশে তেমন একটা আসেন না তারা বাদ যাবেন। তবে অল্প সময়ের জন্য যারা বিদেশে আছেন তাদের গণনা করা হবে।
২০১১ সালের আদমশুমারিতে মোট ২৫টি প্রশ্নপত্র ছিল। কিন্তু নতুন আদমশুমারিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে প্রশ্নপত্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এসডিজির ১০টি গোলের ২৫টি সিন্ডিকেটের তথ্য উঠে আসবে এ শুমারির মধ্য দিয়ে। আদমশুমারি থেকে যে তথ্য পাওয়া যাবে সেখান থেকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে কাজে লাগানো যাবে। ৫০ সদস্য বিশিষ্ট ন্যাশনাল ডাটা কো অরডিনেটর কমিটি (এনডিসিসি) গঠন করা হয়েছে যার মাধ্যমে তথ্যের সত্যতা যাচাই সহ তথ্য প্রদানকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে।
শুমারিটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রথমবারের মতো একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এর উদ্দেশ হলো মাল্টি মডেল জরিপ পরিচালনা করা। অর্থাৎ সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি মোবাইল ফোন, ট্যাব, কল সেন্টার ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা হবে। যারা আদমশুমারিতে তথ্য দেবেন তারা পরবর্তীতে এসএমএস এর মাধ্যমে জানতে পাবেন তাদের গণনা করা হয়েছে কিনা।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ইউনাইটেড নেশনস্ পপুলেশন ফান্ডের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. আশা টরকেলসন। কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আদমশুমারি বক্তব্য রাখেন বিবিএস এর উপ-মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। কারো মতে ২০ কোটি আবারও কেউ বলে ১৬ কোটি। সর্বশেষ আদমশুমারিত ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই জরিপে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিলো ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার। ২০২১ সালের শুমারির পরে সঠিক তথ্য জানা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর পর পর আদমশুমারি করা হয়।
বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। তারপর ১৯৮১ সাল থেকে প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৮
এমআইএস/এসএইচ