দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ইউনিট।
সকালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি দুর্জয়ে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। বিশেষ অতিথি ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল জাহিদ পাভেল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান, লাখাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ, জেলা পরিষদ সদস্য ফাতেমাতুজ জোহরা রিনা প্রমুখ।
এতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। পরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
৬ ডিসেম্বরের ক’দিন আগেই বিদ্যুৎকেন্দ্র, শায়েস্তানগর ও উমেদনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রচন্ড গুলি বর্ষণের মাধ্যমে তাদের আগমন বার্তা ঘোষণা করেছিল। শায়েস্তানগর এলাকায় বর্তমানের টেলিফোন এক্সচেঞ্জর স্থানে পাকিস্তানীদের একটি ক্যাম্প ছিল। তারা ৫ ডিসেম্বরেই শহর ছেড়ে চলে যায়। পাকিস্তানীদের দালাল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লা’র শায়েস্তানগরের বাসভবনে হামলা চালাতে গিয়ে রাজাকারের গুলিতে নিহত হন মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সেনা সদস্য নূরুল ইসলাম মাসুদ। তিনি শহীদ হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা শহরে আর কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন হননি।
রাজাকার, আলবদর আল-শামস বাহিনী সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র হামলার মুখে রাতেই শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বরে শীতের সকালে রক্তিম সূর্য তার তীক্ষ্ণতা দিয়ে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের আরও সতেজ করে তুলে। শহরবাসী বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের অভিবাদন জানায়। তারা ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে মুক্ত হবিগঞ্জ শহরের রাস্তায় নেমে এসে বিজয়ের উল্লাস প্রকাশ করে। এ এক বিস্ময়কর অনুভূতি!
মুক্ত হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের যে দলটি প্রথমে প্রবেশ করে তার নেতৃত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স নায়েক আব্দুস শহীদ। তার সঙ্গে আরও যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তারা হলেন- সদর উপজেলার বহুলা গ্রামের লতিফ, মশাজানের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার আব্দুল কাইয়ূম, সুলতান মামদপুরের মুহাম্মদ আজিম, সুলতানশীর আব্দুল মালেক, হবিগঞ্জ পৌর এলাকার সাবু মিয়া, রইছ আলী, উমেদনগরের শুকুর মিয়া, বাহুবলের হাবিব মিয়া, রাজিউড়ার আলফু মিয়াসহ ৩৫ জন।
তারা সকালে পইলের রাস্তা দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। এর আগে তাদের অবস্থান ছিল সাবাসপুর, বক্তারপুর ও সুয়াইয়া গ্রামে। দলটি শহর প্রদক্ষিণ করে থানায় গিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। পরে জে কে অ্যান্ড এই কে হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় হাজার হাজার জনতা।
যার নেতৃত্বে হবিগঞ্জ মুক্ত হয় সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা অনেক মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স নায়েক আব্দুস শহীদ বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হবিগঞ্জ সদর ইউনিটের কমান্ডার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তার নেতৃত্বে ৩ নম্বর সেক্টরের একটি প্লাটুন ২ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ শহরের পাশে এসে আস্তানা গড়ে এবং দুই জন দালালকে আটক করে হত্যা করা হয়। পরে ৫ ডিসেম্বর ঘেরাও করা হয় হবিগঞ্জ শহর। তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৮
জিপি