ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কুঞ্জরাসের স্মৃতিবিজড়িত ভালোবাসার কমলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৮
কুঞ্জরাসের স্মৃতিবিজড়িত ভালোবাসার কমলা কুঞ্জরাসের যত্নে লালিত কমলাগাছে ধরে শত কমলা। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: জীবিতকালে বাবা একটি কমলার চারা লাগিয়ে বলেছিলেন-‘একে যত্ন করে রাখিস। বাচ্চারা ফল খেতে পারবে।’ বাবার সেই রেখে যাওয়া কমলা গাছে ফিরেছে ফলের সম্ভার। একটি-দুটি নয়; শত শত কমলা ধরেছে সেই ৫৫ বছরের বুড়ো কমলা গাছটিতে।

কালচে সবুজ পাতা ঘিরে সবুজাভ এবং হলদে বর্ণের রসালো ফল। দূর থেকে সেই ফল সম্ভার জুড়ায় চোখ।

কাছে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে কুঞ্জরাসের স্মৃতিবিজড়িত ভালোবাসার কমলা গাছটিকে।
 
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কুঞ্জরাস সিংহের বাড়ির উঠোনের ঠিক ডানপাশে একটি কমলা গাছ নীরবে দাঁড়িয়ে। গাছটি বড় হতে হতে একতলা ছাদে গিয়ে ঠেকেছে। তবে মাটি থেকে দাঁড়িয়ে সেই গাছটির ফলগুলোকে ধরা বড় কঠিন। ফলগুলোকে ধরতে হলে ছাদে উঠতে হয়।

কুঞ্জরাস সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা বিশ্বাম্বর সিংহ। তিনি পেশায় কৃষিজীবী হলেও ফল-ফুলের প্রতি তার ছিল আলাদা টান। সেই টান থেকেই জুড়ি উপজেলা থেকে কমলা এনে সেই বীজটি মাটিতে পুতে চারা তুলেছিলেন। তারপর সেই চারাটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে আজ বিশাল গাছে পরিণত হয়েছে, ফল দিয়ে চলেছে ধারাবাহিকভাবে।
কুঞ্জরাসের কমলাগাছে ধরে শত কমলা।  ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
কমলাগাছটির যত্নআত্তি সম্পর্কে কুঞ্জরাস সিংহ বলেন, আমি কোনো কীটনাশক বা ক্ষতিকর সার আজ পর্যন্ত দেইনি। এমন কি জৈবসারও দেই না। শুধু নিয়মিতভাবে পানি দিয়ে যাই। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে প্রচণ্ড গরম পড়লে তখন দিনে এক বালতি করে পানি দিতে হয়। এখন সাধারণ ৪/৫ দিন পর পর পানি দেই।
 
গাছটি সম্পর্কে কুঞ্জরাস সিংহ আরও বলেন, এই কমলা গাছের ফল খেয়ে আমি বড় হয়েছি। সারাবছরই ফল ধরে। যখন তার মৌসুম থাকে না তখনও ৮/১০টা করে ফল গাছে ধরবেই। আর ফলগুলো অম্লমধুর। আমাদের খাবার জন্য কিছু ফল রেখে অবশিষ্টগুলো আমি আমাদের এলাকায় বিক্রি করে দেই। এবার প্রায় ৩শ’ কমলা বিক্রি করে দিয়েছি। এক হালির দাম ৫০ টাকা।
 
বিবাহিত জীবনে এক ছেলে এবং এক মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে সরকারি চাকরি করেন, মেয়ে মণিপুরী তাঁতশিল্পী।
 
কুঞ্জরাসের স্ত্রী সোনামুখী সিংহ বলেন, এই গাছটিকে ঘিরে আমাদের পারিবাবিক স্মৃতি জড়িত। আমার শ্বশুরের লাগানো এই গাছটিকে আমরা খুব যত্ন করি। অতিরিক্ত ফল বিক্রি করে কিছু আয়ও হয় আমাদের।
 
কুঞ্জরাসের মেয়ে মণিপুরী তাঁতশিল্পী রানু সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, আসলে নিজের বাড়ির গাছের ফল খাওয়ার আনন্দই আলাদা। দাদুর হাতের এই বিশেষ কমলাগাছটি আমাদের পরিবারের পুষ্টিচাহিদা পূরণ করে চলেছে নিয়মিতভাবে। যখন মন চায় ছাদে গিয়ে কমলা পেড়ে খাই।

দেশীয় ফল সংরক্ষক রিজুয়ানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কুঞ্জরাসের এই উদ্যোগ আমাদের সবার জন্য অনুকরণীয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।