আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথাই বলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। রোববার (৯ ডেসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্নীতি একটি জাতীয় ব্যাধি। এটি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। সুষম রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাহত করে। জাতীয় এ সমস্যা প্রতিরোধে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে গড়ে তোলা হয়েছে।
নৈতিক আদর্শ ও নৈতিক অবস্থান সৃষ্টির জন্য সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে তরুণদের সম্পৃক্ত করারও কথা বলেন।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, দেশপ্রেম, আদর্শ ও নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধের আন্দোলনকে সার্বজনীন করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ বছরের একটি দিনকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেক ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আজ এই দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে অবমাননা করছে। সমাজ হতে দূরে সরে যাচ্ছে আদর্শ ও নৈতিকতা। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে এদেশের যুবসমাজ সবচেয়ে বড় শক্তি। অদম্য আগ্রহ, সৃজনশীলতা এবং সুন্দর বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যুবসমাজের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ আজ সময়ের দাবি।
প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আজ প্রবীণদের প্রতিনিধি হিসেবে বলতে চাই, প্রাজ্ঞ প্রবীণরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অভিজ্ঞতা, সততা, দক্ষতা এবং ন্যায়নিষ্ঠার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কিন্তু জাতির ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ভর করে তরুণ প্রজন্মের ওপর। বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের যে জোয়ার আজ সৃষ্টি হয়েছে, তার মূলেও রয়েছে তরুণ শিক্ষার্থী। আত্মশক্তি বিকাশের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী সমাজ তথা তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য।
তিনি বলেন, দুর্নীতিকে ‘না’ বলার প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে সর্বাত্মক নৈতিকতা চর্চার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতি দমনের জন্য সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। দেশের যুবসমাজ অসততা, অন্যায় ও দুর্নীতির বিরোধিতা শুরু করলেই কেউ কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি করার সাহস পাবে না।
‘আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে পারি, তবে এর সুফল দেশের প্রতিটি নাগরিক ভোগ করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে’- বলেন প্রধান বিচারপতি।
এর আগে সকাল ৯টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনের সড়কে শান্তির প্রতীক পায়রা ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
তিনি বলেন, দুর্নীতি কোনো রাষ্ট্রের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির প্রকোপের কারণে দারিদ্র্য বিমোচন এবং কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন হচ্ছে না।
‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সকল প্রকার উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে দুর্নীতি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ২ থেকে ৩ শতাংশই গিলে ফেলছে দুর্নীতি। ’
দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয়। দুর্নীতি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। তাই সব পেশাজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ তরুণ এবং প্রবীণ প্রজন্মের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করতে চায় দুদক।
‘আজকের দিনে আমাদের সবার অঙ্গীকার হোক নিজে কোনো অন্যায় করবো না, অন্যকে অন্যায় করতে দেবো না। নিজে ঘুষ খাবো না, অন্যকে ঘুষ খেতে দেবো না।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন প্রমুখ। আলোচনা শেষে অতিথিরা দুর্নীতিবিরোধী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৮
আরএম/এইচএ/