সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলা দিয়ে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে তখন থেকেই দিশেহারা উর্দুভাষী হানাদাররা। মুক্তিপাগল মানুষদের দেহের রক্ত টগবগিয়ে ফুটছে।
সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ থেকে আক্রমণ পর্যায়ক্রমে সাফল্য পেতে থাকলো প্রতিটি উপজেলাতেই। চারদিকে বিজয়ের রণধ্বনি। পায়ের তলা থেকে ক্রমশ মাটি সরে যাওয়া শত্রুসেনারা পালাতে শুরু করলো মুক্তাগাছা উপজেলা দিয়ে।
১০ ডিসেম্বর ভোরে ময়মনসিংহের মুক্তিকামী বাঙালি রচনা করলো নতুন ইতিহাস। সেই ভোরের আলো ফোটার আগেই হানাদারমুক্ত স্বাধীন ময়মনসিংহ। আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে দিয়ে ধরা দিলো তীব্র আকাঙ্ক্ষিত ঐতিহাসিক এক বিজয়।
সবার কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। পত পত করে বাতাসে উড়লো শহীদে রক্তে আর নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের দামে কেনা লাল-সবুজের পতাকা।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ১১ নম্বর সেক্টরের এফ জে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ১৩ রাজপুত রেজিমেন্ট ও ৯৫ ব্রিগেডের ৫৭ মাউন্ট ডিভিশন যৌথভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা আঁটে।
পরে মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা হালুয়াঘাট দিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা টিকতে না পেরে পিছু হটতে শুরু করে হানাদাররা।
৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা প্রথমে ফুলপুর ও পরবর্তীতে তারাকান্দা, শম্ভুগঞ্জ ও ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে যেতে শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার বাহিনী ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
সেদিন মুক্ত ময়মনসিংহের ইতিহাস সৃষ্টিকারী সকাল কেমন ছিলো, কার হাতে উড়েছিলো লাল-সবুজের পতাকা সেইসব স্বর্ণালী স্মৃতির টুকরো টুকরো ভাষ্যে ওঠে আসে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের কণ্ঠে।
ওই সময় তিনি ছিলেন মুক্তিবাহিনীর যুব শিবির প্রধান। বাংলানিউজকে মতিউর রহমান বলেন, ওইদিনের সোনালি সকালে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে ময়মনসিংহ শহরের দিকে আসতে থাকে মানব স্রোত। মুক্তিযোদ্ধা-জনতার বিজয় মিছিল শুরু হয় নগরীর এসকে হাসপাতালের সামনে থেকে। মিত্রবাহিনীর কমান্ডার সানথ সিং বাবাজী মিছিলে আমার হাত ধরে রেখেছিলেন। সবার গন্তব্য ছিলো ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজে। মুক্তির আনন্দে উদ্দীপ্ত সবাই। এরপর সার্কিট হাউজে এসে আমি বাবাজীকে পতাকা উত্তোলন করতে অনুরোধ করি।
‘তিনি আমাকে বলেন, এই কৃতিত্ব তোমার দেশের। তুমিই পতাকা উত্তোলন করো। আমি লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করলে শুরু হলো গগণ বিদারী স্লোগান, জয় বাংলা। সেই দিনের সেই সোনালি স্মৃতি আজো অম্লান। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
এমএএএম/আরবি