এমনকি চালক-যাত্রী উভয়েই মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত তিন চাকার এই যানে ছুটে চললেও তাদের যেন নিয়ন্ত্রণ করার মতো ক্ষমতা নেই কারো! অবাক করা এই চিত্র ময়মনসিংহের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত অটোরিকশা চালকদের।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের প্রায় ৯০ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের লাইসেন্স নেই।
তবে বিআরটিএ’র ময়মনসিংহ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল খালেকের দাবি, জেলায় লাইসেন্সহীন চালকের সংখ্যা ৭৫ শতাংশের চেয়ে বেশি হবে না। এসব যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে নিয়মিতই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
স্থানীয় বিআরটিএ’র দেওয়া তথ্য মতে, ময়মনসিংহ জেলায় রেজিস্ট্রেশন রয়েছে এমন সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার। এর বাইরে অবৈধ অটোরিকশা রয়েছে আরো ৪ থেকে ৫ হাজার। এই দুই হিসাবে জেলায় চালকের সংখ্যা ১৫ হাজারের কাছাকাছি।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কসহ তিনটি মহাসড়ক ও প্রতিটি আঞ্চলিক সড়কে প্রতিনিয়তই বাড়ছে এই ছোট যানের সংখ্যা। মহাসড়ক ছাড়া প্রতিটি আঞ্চলিক সড়কে অটোরিকশা ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন সার্ভিস না থাকায় শতভাগ ঝুঁকিযুক্ত এই যানবাহনই একমাত্র ভরসা।
গত কয়েকদিন ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক, ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ-মুক্তাগাছাসহ একাধিক সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। বেশিরভাগ চালকরাই জানান, অটোরিকশার মতো ছোট যান চালাতে সাধারণত লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়ে না।
মাঝে মধ্যে অভিযান হলে তখন পুলিশের সঙ্গে দরকষাকষি করে রক্ষা মেলে। লাইসেন্সের চিরুনি অভিযান চললে শতকরা ৯০ ভাগ চালক রাস্তায় নামতে পারবেন না। তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর চালকরা নিজেদের জীবনের স্বার্থেই সচেতন হচ্ছেন এমন বক্তব্যও এসেছে চালকদের কাছ থেকে।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার একটি সিএনজি স্টেশনে আলাপ হলো নয়ন মিয়া (৩৫) ও আদিল শেখ (৪০) নামে দুই চালকের সঙ্গে। তাদের বাড়ি সদর উপজেলার চুরখাই এলাকায়। মূলত মহাসড়কের চুরখাই এলাকা থেকেই নানা প্রান্তে অটোরিকশা নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান তারা।
নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে চাইলে নয়নের জবাব, ‘মিছা (মিথ্যা) কইয়া (বলে) লাভ নাই। আমার কোনো লাইসেন্স নাই। শতকরা ৯০ শতাংশ চালকেরই নাই। পুলিশ ধরলে চা-পান খাওয়ার টেহা (টাকা) দিয়া কাইট্যা (কেটে) পড়ি। ’
পাশেই দাঁড়ানো চালক আদিল শেখ জানান, শতকরা ১০ ভাগ অটোরকিশা চালকের লাইসেন্স রয়েছে। তবে এদের তিন চাকার যান চালানোর মতো লাইসেন্স নেই। যেটা আছে সেটাকে বলা হয় ‘লাইট’ (হালকা মোটরযান) লাইসেন্স। এই লাইসেন্স দিয়ে মূলত পিকআপ থেকে শুরু করে চার চাকার যান চালানো যায়। ’
সিএনজি চালকদের লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে অভিযোগ করেন সাইফুল ইসলাম (৪৫) নামে এক যাত্রী। ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া রুটে নিয়মিত এই যানে চলাচল করেন তিনি। সাইফুল বলেন, অটোরিকশা চালকের বেশিরভাগই আনাড়ি। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। লাইসেন্স নেই এটা তারা নিজেরাও জোর গলায় স্বীকার করেন। শরীরের জোরে তারা অটোরিকশা চালান। বিকল্প কোনো যান না থাকায় চলাচলের জন্য আমাদের সামনে আর কোনো পথও খোলা নেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ময়মনসিংহ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, ‘লাইট লাইসেন্স (হালকা মোটর যান) দিয়ে অনেক চালক অটোরিকশা চালিয়ে থাকেন। তবে এটা ঠিক এখনো পর্যন্ত কোনো চালকেরই থ্রি হুইলারের লাইসেন্স নেই। এসব লাইসেন্সবিহীন চালক ও অবৈধ যানের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
এমএএএম/আরএ