ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহসড়কের ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর এলাকায় ফেনী নদীর উপর এ ব্রিজের অবস্থান। জানা গেছে, ১৯৫২ সালে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্বাধীনতার আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ফেনী অংশে শুভপুর ব্রিজটি ছিল এই অঞ্চলের দীর্ঘ ব্রিজ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চালু হলে এই অংশে যানবাহনের চাপ কমে। তবে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে ঢাকা-চট্টগ্রামগামী গাড়ি ছাড়াও প্রতিদিন ব্রিজের উপর দিয়ে তিন জেলার ভারী সব যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় জনগণ জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রিজের আশপাশে মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্থ ও দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় ব্রিজটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
ব্রিজের মূল চারটি পিলারের মধ্যে একটি পিলারের তলার মাটি সরে গেছে। ফলে যানবাহন চলাকালে এটি দুলতে থাকে। যেকোনো সময় ব্রিজের পশ্চিম পাশের অংশ নদীতে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাঝখানে ৫০ ফুট ঢালাইয়ের কার্পেটিং উঠে গেছে। আবার কয়েক স্থানে গর্তও সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিজের উত্তর পাশে শত ফুট লোহার রেলিং চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। রেলিং যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।
যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজ ভেঙে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সম্প্রতি ফেনী সড়ক ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধে ব্রিজের মাঝখানে পিলার স্থাপন করে দিয়েছে।
ব্রিজটি ভেঙে পড়লে চরম ভোগান্তিতে পড়বে ফেনী, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকার লাখ লাখ মানুষ।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ব্রিজটি ভালোই ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে এ ব্রিজ থেকেই শত্রুদের মোকাবিলা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাকহানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের ফেনী প্রান্তে ১০ম পিয়ারে মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে ব্রিজের স্লাব কিয়দাংশ ধ্বংসের মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
এছাড়া যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের সেক্টর কমান্ডাররা এই ব্রিজের আশপাশে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। পাকহানাদারদের গোলাবারুদের দাগ এখনও ব্রিজের গায়ে লেগে আছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিধ্বস্ত অংশ পুনরায় মেরামত করা হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এবং ‘কলমিলতা’সহ বহু বাংলা ছায়াছবির শুটিং স্পট হিসেবে শুভপুর ব্রিজ ব্যবহৃত হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, স্বাধীনতা যুদ্ধের সাক্ষী এ ব্রিজটি সংস্কার করে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণের পাশাপাশি যান চলাচলে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।
ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, এই ব্রিজে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি রয়েছে। এটি সংরক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষকে আমরা অনেক আগেই প্রস্তাব দিয়েছি।
ফেনী জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আবদুল হান্নান বলেন, ব্রিজটি অচল হয়ে গেছে। এটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।
ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় ব্রিজটি সংরক্ষণ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটির পাশে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এর সয়েল টেস্ট হয়েছে, ডিজাইন তৈরির কাজসহ অন্য প্রস্তুতি চলছে। এসব কাজ সমাপ্ত হলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সেতুটি বহাল রেখে পাশেই নতুন ব্রিজ নির্মাণের লক্ষে ডিপিপি দ্রুত প্রনয়ণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ব্রিজটির পাশে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
এসএইচডি/আরআর