এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ছয় লাখ ১৪ হাজার ৫৮৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। ২০১৭ সালে একই সময়ে গেছেন ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৮ জন কর্মী।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নিজস্ব লোকদের বিভিন্ন খাতে চাকরি দেওয়ার জন্য বিদেশি শ্রমিকদের দেশটি থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি লিবিয়াসহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শ্রমিকদের জন্য কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এতে শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসার ঘটনাও বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিকরা ফিরলেও এখন পর্যন্ত বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছে না সরকার। এজন্য মধ্যপ্রাচ্যের নির্ভরতা কমিয়ে আনাসহ বেশি কর্মীর বদলে দক্ষকর্মী পাঠানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সিনিয়র গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলানিউজকে বলেন, রেমিট্যান্স ও জনশক্তি রফতানি বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্যের নির্ভরতা কমিয়ে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। আমাদের সিঙ্গাপুর, জাপান, ইউরোপের মতো দেশের দিকে যেতে হবে। এজন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ, ভাষা, আইটি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী তৈরিতে সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ তেল নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে দেশগুলোতে নিজস্ব লোকদের বিভিন্ন খাতে চাকরি দেওয়ার জন্য বিদেশি শ্রমিকদের দেশটি থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি আমাদের বেশিরভাগ অভিবাসী অদক্ষ বা অর্ধদক্ষ। এ কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় তারা কম বেতন পেয়ে থাকেন। একইসঙ্গে বৈধপথে রেমিটেন্স প্রভাব বাড়াতে সরকারকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ'র (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ নোমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ না করে বেশি করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে নতুন নতুন দেশে কর্মী পাঠাতে হবে। তাহলে কর্মী কম পাঠিয়েও বেশি লাভবান হওয়া যাবে। এছাড়া আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের নির্ভরতা কমাতে হবে। নতুন বাজারের দিকে যেতে হবে। এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে চেষ্টাও করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে চলতি বছরের ১০ মাসে কর্মী গেছেন ২ লাখ ৬ হাজার ৭৬৮ জন। গতবছর একই সময়ে জনশক্তি রফতানি হয়েছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৩ জন। সেবছর মোট রফতানি হয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৩০৮ জন।
একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত জনশক্তি রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৫৯৯ জন। এর আগের বছরের একই সময়ে জনশক্তি রফতানি হয়েছিল ৩ হাজার ২০১ জন। সে বছর মোট রফতানি হয়েছে ৪ হাজার ১৩৫ জন।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কুয়েতে চলতি বছরের ১০ মাসে রফতানি হয়েছে ২৬ হাজার ৩৭৩ জন। গত বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৪২ হাজার ৩১ জন। মোট রফতানি হয়েছিল ৪৯ হাজার ৬০৪ জন।
ওমানে চলতি বছর রফতানি হয়েছে ৬০ হাজার ১৯৯ জন কর্মী। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত হয়েছিল ৭৪ হাজার ৯৪৩ জন কর্মী।
একইভাবে এ বছরের ১০ মাসে কাতারে কর্মী রফতানি হয়েছে ৬৩ হাজার ৩৪৪ জন। গত বছর রফতানি হয়েছিল ৭০ হাজার ৪৪০ জন।
বাহরাইনে চলতি বছর রফতানি হয়েছে ৮১১ জন। গত বছর এসময়ে রফতানি হয়েছিল ১৮ হাজার ৪১০ জন।
এদিকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বাড়লেও কমেছে রেমিট্যান্স। চলতি বছরের ১০ মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৮ জন। গত বছর রফতানি হয়েছিল ৯৯ হাজার ৭৮৭জন। এর মধ্যে ১০ মাসে হয়েছিল ৬৬ হাজার ৩৮৬ জন।
সিঙ্গাপুরের নির্মাণ খাত বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশটিতে চলতি বছরের ১০ মাসে কর্মী রফতানি হয়েছে ৩৫ হাজার ১১৫ জন। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩৩ জন।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৫২৮ শ্রমিক (নারীসহ) বিশ্বের প্রায়সব দেশে কাজের জন্য গিয়েছেন। এসব শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৪ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
জিসিজি/আরআইএস/