মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর শ্রমভবনে অনুষ্ঠিত সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, আতিকুল ইসলাম, শ্রমিকনেতা আমিরুল হক আমিন, মাহবুবুর রহমান ইসমাইল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে টিপু মুনশি বলেন, চলমান শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে আমরা দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। শ্রমিকনেতারা মনে করছেন, কিছু গ্রেডে মজুরি কমে গেছে। মালিকপক্ষ বলছে তেমনটি হয়নি। সেজন্য মালিক ও শ্রমিকপক্ষের পাঁচজন করে দশজন এবং বাণিজ্য ও শ্রমসচিবকে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা বসে সমস্যার সমাধান করবেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই সমস্যার সমাধান অবশ্যই হয়ে যাবে। মজুরি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনা করে এক মাসের মধ্যেই সমাধান করা হবে।
এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের রাস্তায় বিশৃঙ্খলা না করে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শ্রমিকরা যাতে কোনো গুজব কিংবা উস্কানিতে পা না দেন আমরা সেই অনুরোধ করছি। আজকের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। যারা ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে তারা শ্রমিক না। তারা এ ট্রেডের বন্ধু না। তাদের কঠোর হাতে দমন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক একটা বাইসাইকেলের দুই চাকা। তাদের একসঙ্গেই এগোতে হবে। কোথাও কোনো ইরেগুলারিটি থাকলে সেটা দেখা হবে। কিন্তু কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, নতুন কাঠামোতে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা হবে। নতুন মজুরি কাঠামোর কোথাও কোনো অসুবিধা থাকলে আলোচনা করে তা ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে। শ্রমিকের মজুরি কোনো দিন কমবে না। তাই আর কোনো বিশৃঙ্খলা নয়। সবাইকে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি।
শ্রমিকনেতা আমিরুল হক আমিন বলেন, আমরা শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় করতে চাই। কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি কিংবা কারখানা ভাঙচুর করে দাবি আদায়কে আমরা সমর্থন করি না। নতুন মজুরিকাঠামো নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা নবগঠিত কমিটি সমাধান করবে।
উল্লেখ্য, সরকারি মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন ও বেতন বাড়ানোর দাবিতে গত রোববার (৬ জানুয়ারি) থেকে টানা তিনদিন সাভারের হেমায়েতপুর শিল্পাঞ্চল এলাকা, রাজধানীর উত্তরা ও কালশীতে বিক্ষোভ এবং রাস্তা অবরোধ করে আসছিলেন পোশাক শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। ডিসেম্বর মাসে নতুন কাঠামো কার্যকর হয়। চলতি মাস থেকে বাড়তি মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা। তবে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রমিকেরা।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৯
জিসিজি/আরআর