সোমবার (১৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন টিপু মুনশি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অযৌক্তিক, এর কোনো কারণ নেই।
চালের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে কী করা যায় তা নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় যেন দ্রুত কাবিখা ও টিআরসহ বিভিন্ন সহযোগিতা চালু করে। এটা করলে চালের বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এই মুহূর্তে কৃষকের কাছে ধান নেই। ধান মিলারদের কাছে। তাই হঠাৎ করে চালের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ কৃত্রিমভাবে চালের মূল্য বাড়িয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগে থেকে আমি কাউকে সন্দেহ করতে চাই না। তবে ব্যবসায়ীরা ছোটখাটো সুযোগ পেলে নিয়ে থাকে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয় বসে থাকবে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে কঠোর তদারকি থাকায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে পারেনি। ফলে নির্বাচনের পর তদারকিতে ঘাটতির সুযোগ বুঝে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু সিন্ডিকেট। তাদের কারসাজির কারণে ধানের বাম্পার ফলনের পরও ভরা মৌসুমে বেড়েছে চালের দাম। ৫০ কেজির বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে, নতুন বছরে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৬ টাকা। ফলে উৎপাদন ভালো হওয়ার পরও চালের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
দাম বাড়ানোর জন্য মিল মালিকরা দুষছেন আড়তদার-ব্যবসায়ীদের। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাস্তায় চালের ট্রাকে চাঁদাবাজি ও খুচরা বিক্রেতাদের সরকার মনিটরিং না করায় চালের বাজারের এই অবস্থা। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য—মিল থেকে বেশি দামে কিনতে হয় তাই বেচতেও হচ্ছে বেশি দামে। অন্যদিকে বাজারে ধানের সঙ্কট থাকায় এর প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে বলে জানিয়েছেন মিল মালিকরা।
চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাদামতলী চাল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এটা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এখন দেশে কোনো বন্যা, খরা, বৃষ্টি কিছুই হয়নি। সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। তাহলে কেন চালের দাম বাড়বে? চালের দাম বাড়ার যদি কোনো কারণ থাকে তা হলো—সিন্ডিকেট। মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
নিজাম উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই নির্বাচনের পর রশিদের চালের দাম বস্তায় বাড়ানো হয়েছে ৩০০ টাকা। দেশে কি এমন ঘটল যে, হঠাৎ করে চালের দাম এমন বাড়িয়ে দিতে হবে। মূলত নির্বাচনের পর সরকারকে চাপে ফেলতে মিল মালিকরা জোট হয়ে এ কাজ করেছেন। তবে চালের দাম স্বাভাবিক করতে হলে মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২ জানুয়ারি থেকে চালের দাম বাড়া শুরু হয়। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে ভালোমানের মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা; যা নির্বাচনের আগে ছিলো ৫০ থেকে ৫২ টাকা। সে হিসেবে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। তবে সব থেকে বেশি বেড়েছে মাঝারি মানের চালের দাম। বর্তমানে মাঝারি মানের চাল বিআর-২৮ ও লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা কেজি; যা আগে ছিলো ৩৮ থেকে ৪২ টাকা। অর্থাৎ নতুন বছরে মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। নির্বাচনের আগে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মোটা চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। এ হিসাবে মোটা চালের দাম ৪ টাকা কেজিতে বেড়েছে।
এদিকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে কয়েক মাস ধরেই চালের দাম বাড়ছিলো। ওই বছর এপ্রিলে আগাম বন্যায় হাওরের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। সে সময় সরু চালের দাম খুচরায় কেজি প্রতি ৭০ টাকা পর্যন্ত বাড়ে; সমানতালে বাড়ে মোটা চালের দামও। পরে নতুন ধান ওঠায় চালের দাম কমে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
জিসিজি/এমজেএফ