ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে’ আবুধাবি যাচ্ছে ১৫ প্রতিবন্ধী  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
‘ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে’ আবুধাবি যাচ্ছে ১৫ প্রতিবন্ধী   আবুধাবিতে খেলতে যাচ্ছে ১৫ প্রতিবন্ধী কিশোর। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: সব প্রতিবন্ধকতা দূরে রেখে আবুধাবিতে স্পেশাল অলিম্পিকস ‘ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে’ যাচ্ছে পাবনার ১৫ জন প্রতিবন্ধী কিশোর। 

প্রতিবন্ধকতাকে পরাজিত করে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের স্পেশাল অলিম্পিকস-এ অংশ নিয়ে প্রতিবন্ধী এই কিশোররা আবারও জয় করতে চলেছে সোনা, রূপা আর ব্রোঞ্জ পদক।  

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখানোর পরে এবার স্পেশাল অলিম্পিকস-এর ‘ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে’ র আসরে দেশের ১১০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে পাবনার ১৫ জন প্রতিবন্ধী অংশ নিতে মার্চে যাচ্ছে দুবাইয়ের রাজধানী আবুধাবিতে।

আর এই সম্মানের কারণে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

সংবর্ধনাপ্রাপ্তরা হলো-কনক, সাদিয়া, ফাবিয়া, রোহান, রাজিব, আকাশ, স্বপ্না, চাঁদনী, অনিতা, তামান্না, তানাম, খুশী, যুথী, রাব্বী, বৃষ্টি। এরা সবাই প্রায় সমবয়সী।  

সামাজিকভাবে বেড়ে ওঠা অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিক জীবন নয় তাদের। তবুও অসাধ্যকে সাধ্য করে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। এর আগেও তারা এর প্রমাণ দিয়েছে।  

এই কিশোরদের মধ্যে অনেকেই বিদেশের মাটিতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করেছে বিভিন্ন ধরনের পদক। সমাজের অন্য ছেলে-মেয়েদের মত ভাব প্রকাশে রয়েছে তাদের পার্থক্য। স্বাভাবিক জীবন যাপনে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। আবার এদের মধ্যে বেশির ভাগের পারিবারিক অবস্থাও খুব সাধারণ। অর্থনৈতিক টানাপড়েন রয়েছে তাদের পরিবারে। পরিবার এবং সুশীল সমাজের অনেকে তাদের বোঝা ভাবেন। অথচ এই প্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীরা গত কয়েকবছর ধরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে বাংলাদেশের। গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অংশ নিয়ে বিপুল সংখ্যক স্বর্ণসহ অন্যান্য পদক জয় করেছে এই প্রতিবন্ধীরা।  

এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মার্চে দুবাইয়ের রাজধানী আবুধাবিতে অনুষ্ঠিতব্য ‘ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে’ অংশ নিতে দেশ ছাড়বে এই প্রতিবন্ধী কিশোররা। আর তাদের মধ্যে পাবনার ১৫ জন প্রতিবন্ধী।  

প্রতিবন্ধী কিশোরদের সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে এ উপলক্ষে পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে পাবনা শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়াম মিলনায়তনে তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে সংবর্ধনা দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। তাদের সঙ্গে কথা বললে প্রতিযোগীরা ইশারায় জানায়- দেশের জন্য খেলতে পেরে তারা নিজেদের গর্বিত মনে করছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আর সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষদের চেয়েও ভালো কিছু করতে পারবে বলে বিশ্বাস তাদের। নিজেদের সফলতা আর দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনার প্রত্যাশায় তারা দেশবাসীর কাছে দোয়া চায়।

বেশ কয়েকজন কিশোরের অভিভাবক তাদের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, প্রথম দিকে আমরা মানসিকভাবে খুব কষ্টে ছিলাম। খুব কষ্ট পেতাম যখন স্বাভাবিক শিশু-কিশোররা খেলা করতো এবং কথা বলতো। তবে আজ আর সেই ভাবে কষ্ট অনুভব করি না। কারণ এই সরকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বেশ কাজ করছে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা না থাকলে আমাদের এই শিশুরা তাদের প্রতিভা দেখাতো কোথাই। সরকারকে সেজন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান প্রতিবন্ধী কিশোরদের অভিভাবকরা। স্বাভাবিক শিশুদের চেয়ে তারা অনেক ভালো করছে।  

অভিভাবকরা বলেন, সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে পরিবারের পক্ষে এদের প্রতি আরো ভালভাবে নজর দেওয়া যাবে। এবারের স্পেশাল অলিম্পিকস-এর ‘ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে’ অংশ নিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।  

এবারের স্পেশাল অলিম্পিকস্ গেম নিয়ে কথা হয় স্পেশাল অলিম্পিকস্ এর পরিচালক ও পাবনা সাব চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হোসেন বাদশার সঙ্গে।

তিনি বলেন, পাবনাতে একজন প্রতিবন্ধী খেলোয়াড় নিয়ে শুরু হলেও এর সংখ্যা আজ অনেক বেড়েছে। প্রথম দিকে পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে বাহিরে আনতে লজ্জা পেতো। আর আজ তারা গর্ব করে বলতে পারে। প্রতিবন্ধী শিশু পরিবারে বোঝা না। তবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আরো সহযোগিতা পেলে এরা ভাল করবে বলে মনে করেন তিনি।
 
পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও স্পেশাল অলিম্পিকস পাবনা সাব চ্যাপ্টার পাবনা জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিবারের মত এবারো বাংলাদেশ থেকে প্রায় শতাধিক প্রতিবন্ধী কিশোর স্পেশাল অলিস্পিকস্ এ অংশগ্রহণ করবে।  

এর আগেও পাবনার অনেক শিশু জাতীয় এবং দেশের বাইরে স্বর্ণ পদক অর্জন করেছে। এবারও পাবনার অংশগ্রহণকারীরা ভাল করবে বলে আমি আশাবাদী। সব শিশু আমাদের কাছে সমান। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো। আগের কোনো সরকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ভাবেনি। বর্তমান সরকার তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য সরকারি সব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। তাই অভিভাবকদের কোনো চিন্তা নাই সরকার আপনাদের সঙ্গে আছে। প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বা রাষ্টের বোঝা নয় এরাও সম্পদ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।