ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জারের ঠ্যালায় ঘুম ধরে না বাহে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৯
জারের ঠ্যালায় ঘুম ধরে না বাহে ছবি: বাংলানিউজ

গাইবান্ধা: বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত বারোটা ৪০ মিনিট। গাইবান্ধা সদরের রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গোপালপুর গ্রামের দিঘীরপাড় এলাকা। রাস্তার ধারে স্ট্রিট লাইটের নীচে খড়কুটোয় আগুন ধরিয়ে উত্তাপ নিচ্ছিলেন সাদা মিয়া, মধু মিয়া, নুরুন্নবী মিয়াসহ বেশ কয়েকজন। মধ্যরাতেও রাস্তার পাশে জটলা কেন? প্রশ্ন ছোড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধ সাদা মিয়া বললেন, জারের (শীতের) ঠ্যালায় ঘুম ধরে না বাহে।

এরই মধ্যে সাংবাদিক পরিচয় শুনে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিলেন দিন মজুর নুরুন্নবী। কুয়াশা ঘেরা শীতের রাতে চায়ের উষ্ণতা আর গাল গল্পে মেতে ওঠে মধ্যরাতে গ্রামীণ এই আড্ডা।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শীত প্রসঙ্গে রান্জু মিয়া বললেন, এবার ক্যামা ঠান্ডার কিছু বুজি না বাহে। সময়তে কমে ফির সময়তে বাড়ে। চায়ের দোকানদার মধু মিয়া বলেন, মদ্দে মদ্দে উত্তুরা বাতাস বয়। মোনে হয় জারোতে টোকলা নাগি যাই।

শীত মোকাবেলায় প্রস্ততি সম্পর্কে এই গ্রামের রিকশাচালক মাইদুল মিয়া বললেন, দুই বছর আগে একটা ছুইটার কিনচিলাম তাকে গায়োত দিয়ে কোন রকম চলতিচে। নয়া কাপড় চোপড় কিনি কি দিয়া। হাতের উপুর দিয়্যা সংসার। প্যাটোত দিলে গায়োত হয় না, গায়োত দিলে প্যাটোত হয়না। কোন রকম কষ্ট করি জারটা পার করল্যাম।

আড্ডা থেকে মধু মিয়া খড়ের আগুন বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, শুনি তামানবাড়ি বলে সগলে কম্বল দেয়। হামার ইতি অ্যালাও ক্যাও আসে নাই বাবা।

গল্প তখন বেশ জমে উঠেছে। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতে দিতে আড্ডার এক সদস্য বললেন, এলাকার গরীব মানুষ গুল্যার  খালি কষ্ট। ছোলপোল আর বুড়া গুলের দূর্ভোগের শ্যাষ নাই। শীতে সরকারী বেসরকারীভাবে কতজন বলে কম্বল পায় হামার এদিক কেউ খোঁজ নেয় না। চেয়ারম্যান  মেম্বাররা খালি কয় কম্বল শ্যাষ হয়্যা গেছে পরের বছর দেমো।

শীতবস্ত্রের বরাদ্দের ব্যাপারে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, শীতের সময় যে কম্বল বরাদ্দ পাওয়া যায় তার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। তাই পুরো ইউনিয়নে সব শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না। তারপরেও যথাসাথ্য চেষ্টা করছি অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।

জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে জানান, ইতিমধ্যে জেলায় অসহায়, গরীব ও শীতার্ত মানুষের মাঝে প্রায় চল্লিশ হাজার কম্বল বিতরন করা হয়েছে। আরও কিছু কম্বল আমাদের হাতে রয়েছে, সেগুলো জেলার যে সব জায়গায় এখন পযর্ন্ত শীতবস্ত্র পৌঁছায়নি সেইসব এলাকায় সঠিক তালিকা করে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে শীতার্ত মানুষের বস্ত্রের চাহিদা শতভাগ পুরন করা সম্ভব নয় তাই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসহ সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘন্টা, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।